ডেস্ক রিপোর্ট: পাবনায় মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ মাহফিলের তবারক খেয়ে বিষক্রিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৬ জন অসুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন।
এর আগে রোববার তবারক খেয়ে সুখী আক্তার (১৫) নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী মারা যায়। মৃত সুখী সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের সেলিম শেখের মেয়ে ও শহরের আহমেদ রফিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
একই ঘটনায় সোমবার বিথী (১১) নামে এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আক্রান্তরা জানান, ৭ জুলাই পাবনা সদর উপজেলার বলরামপুর সরদার পাড়ায় জনৈক শহিদ সরদারের বাবা মৃত ইবাদ আলী সরদারের মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ মাহফিলে তাবারক হিসেবে খিচুড়ি দেয়া হয়। ওই খিচুড়ি খেয়ে গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৪০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শুক্রবার রাত থেকে তারা মাথা ও পেট ব্যথা, বমি, জ্বর এবং পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হন। শনিবার সকাল থেকে ১৫৬ জন আক্রান্ত হন। রোববার বিকেল পর্যন্ত পাবনা জেনারেল হাসাপাতালে ৪০ জনকে ভর্তি করা হয় এবং সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হন ৫৩ জন। ১০৩ জনকে স্থানীয় বলরামপুর গ্রামে অস্থায়ী স্বাস্থ্য ক্যাম্প বসিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, তবারক খেয়ে অসুস্থতার খবর পেয়ে ঢাকার জাতীয় রোগ তত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাঁচ সদস্যর একটি বিশেষজ্ঞ টিম রোববার রাতে পাবনায় এসে পৌঁছান।
বিশেষজ্ঞ টিম অসুস্থ রোগীদের দেখতে সোমবার সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে যান। পরে তারা ঘটনাস্থল বলরামপুর গ্রামে যান। বিশেষজ্ঞ টিম গ্রামে আক্রান্তদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া তারা রোগ শনাক্ত করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন।
পাবনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আক্রান্তরা বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা এবং জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার থেকে সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৫৬ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এখনো ৫৩ জন ভর্তি রয়েছেন।
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাবনা জেনারেল হাসাপাতাল ছাড়াও বলরামপুরে অস্থায়ী ক্যাম্প করে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই রোগ শনাক্ত করা যায়নি। জাতীয় রোগ তত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাঁচ সদস্যর একটি বিশেষজ্ঞ টিম রোগের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা পরীক্ষা করে পরে আমাদের জানাবেন।
জাতীয় রোগ তত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস রহমান সরকার ও ডা. পারভেজ আহমেদ ওই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা সোমবার সকাল থেকে সারাদিন পাবনা জেনারেল হাসপাতাল এবং ঘটনাস্থল সদর উপজেলার বলরামপুরে কাজ করেছেন।
টিমের সদস্য ডা. ফেরদৌস রহমান সরকার জানান, তারা নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। পরীক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষকে দেবেন। তারা সেটি পাবনার স্বাস্থ্য বিভাগকে জানাবেন।
এদিকে, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সিটের সংকুলান না হওয়ায় অনেককে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের আরএমও ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন বলেন, এমনিতে প্রতিদিনের রোগীর সংখ্যা হাসপাতালের শয্যার দ্বিগুণ। তারপর হঠাৎ করে এই রোগীদের নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা অসুস্থদের সুস্থ করে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আশা করি সবাই সুস্থ হয়ে উঠবেন।