সীমান্তে হামলা না চালাতে পাকিস্তানকে ভারতের অনুরোধ

প্রকাশিত: ১১:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট: পাকিস্তান চলতি বছর সীমান্তে ২ হাজার ৫০ বারের বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাবর্ষণ করেছে। এতে ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

২০০৩ সালে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার জন্য পাকিস্তানের প্রতি ভারত বারবার অনুরোধ জানালেও তা উপেক্ষা করেছে ইসলামাবাদ। রোববার ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

শনিবার পাকিস্তান জাতিসংঘের এক বৈঠকে কাশ্মীর সঙ্কট তুলে ধরার পরদিন ভারত এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করলো। জাতিসংঘের ওই বৈঠকে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করে পাকিস্তান। তবে ভারত পাকিস্তানের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাবর্ষণ ও সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

বিজেপি সরকার বলছে, আমরা পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, সীমান্ত পেরিয়ে পাক সন্ত্রাসীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও ভারতীয় নিরাপত্তা চৌকি এবং বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরে পাকিস্তান ২ হাজার ৫০ বারের বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে; এতে ২১ ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছেন। ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমানায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আমরা বারবার পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, বিনা উসকানিতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসীদের অবৈধ অনুপ্রবেশের জবাবে ভারতীয় সামরিক বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে।

এদিকে রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একই সঙ্গে এই বিরোধ ভারত-পাকিস্তান সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা এবং যুদ্ধ হলে পুরো বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাশ্মীর পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার দেশের হাতে সীমিত বিকল্প রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশি দেশের মাঝে আকস্মিক পারমাণবিক যুদ্ধ বাধতে পারে বলে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান খান বলেন, একেবারে সত্য। কাশ্মীরে যা ঘটছে, সেটি হলো সেখানে কম কিংবা বেশি গণহত্যা চালাচ্ছে ভারত। সেখানে মানুষের ওপর জাতিগত হামলা হচ্ছে। আমি মনে করি, জার্মান নাৎসি শাসনের পর এ ধরনের হামলা দেখা যায়নি।

পাক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরের ৮০ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করছে। যে কারণে এটি পাক-ভারত সংঘাতের কিন্দুবিন্দুতে চলে আসতে পারে। কারণ সেখানে অবৈধ দখলদারিত্ব ও গণহত্যা পরিচালনা করছে ভারত। আর এটি থেকে বিশ্বের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে তারা।

গত ৫ আগস্ট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন-সংক্রান্ত সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেশটির ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারত শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিরা আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে হাজার হাজার কাশ্মীরির প্রাণহানি ঘটেছে; যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের জেরে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্তে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাবর্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বেশ কয়েকবার তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জম্মু-কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতির কারণে যেকোনো মুহূর্তে ‘আকস্মিক যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। অস্থিতিশীল এই অঞ্চল সফর করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল বাচেলেতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র : এনডিটিভি, ডন।