কক্সবাজারে পানিবন্দী পাঁচ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ১:২৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২৩

ধলাই ডেস্ক: অতিমাত্রায় বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, রামু ও মহেশখালীর নিম্নাঞ্চলে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এতে ওই এলাকার মানুষের  মধ্যে বেড়েছে দুর্ভোগ৷

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, সোমবার রাত ৯ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

মাতামুহুরি, বাকঁখালীসহ ছোট বড় ৭-৮ টি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বসতবাড়ি ও ফসলী জমি ডুবে গেছে। গত ৩ দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী ও বাকঁখালী  নদীর পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট এ বন্যায় পাঁচ লক্ষাধিক লোকের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নদীর পানিতে তলিয়ে গিয়ে ও ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে দুই শিশুসহ তিন জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে সোমবার বিকেলে  উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মা-মেয়ে পাহাড় চাপা পড়ে মারা গেছে। তারা হলেন, আনোয়ারের স্ত্রী জান্নাত আরা ও তার মেয়ে মাহিমা আক্তার।

সোমবার সন্ধ্যায় মাতামুহুরী নদীর পানি চিরিংগা পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় ৩-৪ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাতামুহুরী নদীর লক্ষ্যারচর হাজিপাড়া পয়েন্টে লাকড়ি ধরতে নদীতে ঝাঁপ দেয় শাহ আলম। এসময় লাকড়ি ধরে কূলে ফেরার সময় পানির তীব্র স্রোতে সে তলিয়ে যায়। শাহ আলম ওই এলাকার জাকের হোসাইনের ছেলে। ২ ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।

অপরদিকে বরইতলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পূর্ব ভিলিজার পাড়ায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলেন আনোয়ার হোসেনের দুই শিশু। একজনের নাম মোহাম্মদ সাবিত (৫) ও অন্যজন তাবাচ্ছুম (১)  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই এলাকার  ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান।

উপজেলার বরইতলী, কৈয়ারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, কোনাখালী, চিরিংগা, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, বদরখালী,  হারবাং, ঢেমুশিয়া, বিএমচরসহ ১৮ টি ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভা এলাকার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। বদরখালী ও পশ্চিম বড় ভেওলা ও ঢেমুশিয়া এলাকায় স্লুইসগেট বন্ধ করে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতায় শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে চকরিয়ার হারবাং, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, কৈয়ারবিল ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে অবৈধভাবে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের তরফে মাইকিং করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মো. জামিল মোরশেদ জানান ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে কোনাখালীর কন্যারকুম এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বানের পানি দেদারছে লোকালয়ে প্রবেশ করছে ।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার-১ আসনের এমপি ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম  বলেন, ‘পানিবন্দী মানুষগুলো যাতে খাবারের সঙ্কটে না পড়েন সেজন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীকে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে ওইসব এলাকা গুলোয় দুর্ভোগ বেড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য বলা হচ্ছে। সেখানে তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। এরইমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।

সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…