আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে তৈরি করেছে আতঙ্ক। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়াচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু মিছিলে যোগ হয়েছেন আরো ৫৭ জন। যেখানে ইরান, ইতালি ও জাপানের নাগরিকও রয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জনে। আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৮২৬ জন। এদের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ৮ হাজার ৮১ জন। আর আরোগ্য লাভ করেছে ৩৬ হাজার ৭২৩ জন। মারাত্মক এ ভাইরাস এখন চীনে কমতে শুরু করলেও বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে এর আক্রান্তের সংখ্যা।
এদিকে, প্রাণঘাতী এ ভাইরাস এপ্রিলের শেষের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন চীনের বিশেষজ্ঞরা। দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঝং নানশান বলেছেন, আমরা নিশ্চিত যে এপ্রিলের শেষের দিকে মূলত এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবেই।
শুক্রবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং জানিয়েছে, প্রাণঘাতি এ ভাইরাস এরইমধ্যে এশিয়া ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকায় ছড়িয়েছে। যেখানে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্রাজিল, সুইডেন, নরওয়ে, গ্রিস, রোমানিয়া, আলজেরিয়া ও এশিয়ার পাকিস্তানের নাম। সবশেষ আক্রান্তের দেশ নাইজেরিয়া। বৃহস্পতিবার এক নাগরিকের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাহিরে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইরানের নাগরিক। দেশটিতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আরো ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মারা গেলেন ২৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
এদিকে ইরানের চেয়ে নিহতের সংখ্যায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, চীনের বাহিরে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করেছে দেশটির চিকিৎসা বিভাগ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২।
দক্ষিণ কোরিয়ার পর এবার আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাফে ১৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আরো ৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫০ জন। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশটির ১০ শহর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তারপরও থেমে নেই আক্রান্তের হার।
জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এখন পর্যন্ত চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই প্রমোদতরীর যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭০৫ জন।
বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণ সাময়িক স্থগিত করেছে সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
গত ৩১ ডিসেম্বর হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু। অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।