দুর্ণীতির মামলায় কমলগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ন জনকে উচ্চ আদালতে কারণ দর্শানোর নোটিশ
কমলগঞ্জ সংবাদদাতা: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নে সরকারি প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ করায় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল। তদন্তে প্রমানিত হলেও দুর্ণীতি দমন কমিশন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদকে অব্যাহতি দেওয়ায় উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করেছিলেন একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর গফুর।
এ রীট আবেদনের শুনানি শেষে শমশেরনগরের ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদসহ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট ৯ জনকে উচ্চ আদালতে কারণ দর্শাণোর করা হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি শেষে তলব আদেশ দিলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২৯ জাুনয়ারি নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পৌছেছে।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৪০টি প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় শমশেরনগরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর গত ২০১৬ সনের ২৩ মার্চ শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদসহ সংশ্লিষ্টদের আসামী করে দুর্ণীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছিলেন। দুদক হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার অঞ্চল থেকে অভিযোগের আংশিক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। সাথে সাথে ১১ লক্ষাধিক টাকা সরকারি তপশিলি ব্যাংকে ফেরৎ প্রদানের পর পুরো অভিযোগ(মামলা ৯/১৬) থেকে চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদকে এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দুদক সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্র্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতিবেদন জমা করেছিলেন। আবেদনকারী উচ্চ আদালতে দুদকের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন।
দীর্ঘদিন মামলাটি বিচারাধীণ থাকার পর গত বছর ২৪ জুলাই এনএক্সা ২৭ নং কোর্টে ১১১ নম্বর আইটেম হাইকোর্ট তালিকায় বিচারাধীণ তালিকায় আসে। পরবর্তীতে ১৪ সপ্তাহ মামলাটি বিভিন্ন পর্যায়ে শুনানির মাধ্যমে বিচারপতি মো. নাজমুল ইসলাম তালুকদার ও কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চে গত ১২ জানুয়ারি ২০২০ শুনানি শেষে শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদসহ ৯জনকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ প্রদান করে তলব করেন।
উচ্চ আদালত ফৌজদারী রিভিশন নং-৩০১৯/২০১৮ (উদ্ভূত স্পেশাল পিটিশন নং ০৯/২০১৬ (কমল) সিনিয়র জজ মৌলভীবাজার মূলে শমশেরনগরের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদসহ ৯জনকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য আজব আলী, ঠিকাদার জোসেফ রাল্ফ, তার স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য মেরী রাল্ফ, ঠিকাদার খালিছ মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য মো. জিতু মিয়া, ঠিকাদার জুনেদ মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য শেলী রানী পাল ও বর্তমান ইউপি সদস্য মো. মাসুক মিয়া।
উচ্চ আদালতের আদেশক্রমে গত ১৮ জানুয়ারি একজন সহকারী রেজিষ্টার (ফৌজ-১)-এর স্বাক্ষরিত নোটিশ গত ১৯ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে এসে পৌছলে ১০ দিন পর ২৯ জানুয়ারি নোটিশগুলো অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের কাছে পৌছে। উচ্চ আদালতে আপিল আবেদনকারী বাদি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, তিনি ৪০টি প্রকল্প উল্লেখ করে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেছিলেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে দুদক হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার অঞ্চল থেকে ৪০টি অভিযোগের মাঝে আংশিক সরেজমিন তদন্তক্রমে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছিলেন। এর পর মাঠ পর্যায়ের দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা পুরো প্রতিবেদনে শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমেদকে আসামী করেও পরবর্তীতে অব্যাহিত প্রদানের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা করেছিলেন। তাই তিনি এ প্রতিবেদনের উপর উচ্চ আদালতে আপিল করায় কয়েকদফা শুনানি শেসে উচ্চ আদালত এ কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত থেকে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত মৌলভীবাজারে ১৯ জানুয়ারি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে আসামীদের নোটিশ প্রদাণের জন্য নির্দেশনাপত্র পাঠালেও রহস্যজনক কারণে ১০ দিন পর ২৯ জানুয়ারি আসামীদের কাছে নোটিশ পৌছে দেওয়া হয়।
উচ্চ আদালতের নোটিশ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ বলেন, আসলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও দুদক হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার অঞ্চলেল উপ পরিচালককে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে যা বলা হয়েছে তা তারা আইনজীবিদের মাধ্যমে জবাব দিবেন।