ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে করে রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও বিমান বাংলাদেশের ওপরই আস্থা রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেকে আমাকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিবর্তে অন্য কোনো এয়ারলাইনসে করে বিদেশ সফরের কথা বলেন। আমি তাঁদের স্পষ্ট করে জানিয়েছি, বিদেশ গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসেই যাব। অন্য কোনো এয়ারলাইনসে নয়। মৃত্যু হলে বিমান বাংলাদেশেই হবে।’ বৈঠকে উপস্থিত সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক এ তথ্য জানান।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতকালের একনেক সভায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কথা উঠে আসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো এক রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ যাওয়ার পথে জানা গেল, তাঁকে বহনকারী বিমানটির নাট-বল্টু খোলা ছিল। কয়দিন আগে আরেকটি ঘটনা ঘটল। বিমান বাংলাদেশের পাইলট পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানটি চালিয়ে কাতার চলে গেছেন। এসব ঘটনার পর অনেকে তাঁকে বলেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে করে আর বিদেশ সফরে না যেতে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেছেন, ‘কেউ ভুলে পাসপোর্ট ছাড়া চলে যেতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে এত হৈচৈ করার কিছু নেই। বিদেশ গেলে আমি বিমান বাংলাদেশে করেই যাব। অন্য এয়ারলাইনসে করে নয়।’
বিমানবন্দরে ‘ডগ স্কোয়াড’ রাখার নির্দেশ : সূত্র মতে, ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিমানবন্দরগুলোয় ‘ডগ স্কোয়াড’ রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন। যানবাহনের চালকদের ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া ঠিক নয় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেকে চালককে দায়ী করে। চালককে দোষারোপ করা হয়। চালকও তো মানুষ। সে জন্য চালকদের বিশ্রামের জন্য সড়কে মাঝে মাঝে বিশ্রামের স্থান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন : একনেক সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ে খেলোয়াড়দের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার আশা ধরে রাখায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। সভায় সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
১১ প্রকল্প অনুমোদন : গতকালের সভায় গাজীপুরের টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে আট হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে টাকা তিন হাজার ৩৮৯ কোটি, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৫৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে চার হাজার ১১৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন জানান, হাইওয়ে, সড়ক নির্মাণের সময় চালকদের বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া শুধু পৌরসভা এলাকায় নয়, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পানি সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেচব্যবস্থায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৭১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া-আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন, এক হাজার ৭৫২ কোটি টাকায় বাংলাদেশের ৩০টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর ব্যবস্থার উন্নয়ন, ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন, ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ, তিন হাজার ৯১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনায় ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্প।