১২ বছর গোসল করেননি ‘পীর বাবা’, কবরের পাশে চলে নোংরামি

প্রকাশিত: ৪:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: এক সময় মসজিদের মুয়াজ্জিন থাকলেও হঠাৎ হয়ে যান পীর। শুরু করেন বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। গড়ে তোলেন দরবার শরীফও। ভুল ধারণা দিয়ে নারীদের বানোনো হয় মুরিদ। তবে এ ‘পীর বাবা’ ১২ বছরে একবারও গোসল করেননি। এমনই অভিযোগ তার ছেলের।

তথাকথিত পীর আখতারের বাড়ি নওগাঁ সদরের দোগাছি গ্রামে। দোগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে দোগাছী ডাঙ্গাপাড়ায় গড়ে তোলেন কাদরীয়া ইয়াছিনিয়া দরবার শরীফ। আর এ দরবার শরীফে চলমান বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী।

গ্রামবাসীর পক্ষে তথাকথিত পীর আখতারের ছেলে মিজানুর রহমান লিখিত অভিযোগে বলেন, বাবা চলতি বছরের অক্টোবরে মারা যান। বাবা কাদরীয়া ইয়াছিনিয়া দরবার শরীফের একজন পীর ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন রকমের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ চলছে। বাবা প্রায় এক যুগ গোসল করেননি।

মিজানুর রহমান বলেন, বাবা দরবারের ভেতরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার করে দক্ষিণ দিক হয়ে ভক্তি করতেন এবং ভেতরের টয়লেট পশ্চিম দিক করে বানিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি সন্তান হিসেবে বাবার এসব ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের ঘোর বিরোধিতা করেছি। বাবার মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাছরিন আক্তার রাণী ও তার সব ভক্ত দরবার শরীফে এসে আমার সম্মতি ছাড়াই ইসলামের নিয়ম না মেনে বাবাকে দাফন করেন।

তিনি আরো বলেন, আমার বাবার কবরের পাশে তবলা বাজিয়ে বিভিন্ন পুরুষ ও নারী এসে নাচ-গান করেন এবং একে অপরের সঙ্গে নোংরামি করেন। এছাড়া বাবা এখনো জীবিত আছে মনে করে কবরের ওপরে বিভিন্ন রকমের খাবার রাখা হয়। ইদানীং আমার ছোট ভাই কিবরিয়াও বাবার মতো পীর সাজার চেষ্টা করছে।

এসব ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে ডিসি, এসপি, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশিদ, শাহজাহান শেখসহ অনেকেই বলেন, এ দরবার শরীফে ইসলামের নামে ভুল ধারণা দিয়ে যুব সমাজ ও অন্যান্য নারী-পুরুষদের মুরিদ বানানো হয়। আর এখানকার ভক্তরা হচ্ছে মাদক সেবনকারী দিনমজুর, রিকশা, ভ্যান চালকসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুষ। যারা আখতারের মুরিদ নিয়েছে তারা এখানে এসে রাতে নাচ-গান করে জিকির করেন। আমরা গ্রামবাসীরা এসব ভণ্ডদের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে চাই।

আখতারের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, আখতার এক সময় ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পীর হিসেবে নিজেকে জাহির করে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ভালো করতে পারিনি। কিছু মাদকসেবী খারাপ মানুষের সঙ্গে চলাচল শুরু করে। তখন তাকে আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলে সে অন্যত্র বাড়ি করে খানকা শরীফ নামের এক আড্ডাস্থল তৈরি করে।

ইউপি সদস্য আফেলাতুন নেছা বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাতে আখতারের ভক্তরা এ দরবার শরীফে আসে আর গাঁজা, মদসহ অন্যান্য মাদক সেবন করে ঢোল বাজিয়ে জিকির করে। তারা কখন কী যে করে তা বলা মুশকিল।

বোয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাছানুল আল মামুন বলেন, আখতার আমাদের গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। তবে মসজিদের ঘড়ি চুরি করার পর তাকে বাদ দেয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার ভণ্ডামি কর্মকাণ্ড। আমি একাধিকবার চেষ্টা করেছি আখতারের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কিন্তু পারিনি। তাই ভণ্ডদের এ দরবার শরীফ উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসনের শক্তিশালী পদক্ষেপ খুবই জরুরি।

সদরের ইউএনও মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ দরবার শরীফ বন্ধ কিংবা উচ্ছেদ করতে হলে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন।