কমলগঞ্জে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেঁতুর উপর দিয়ে চলছে না গাড়ী

প্রকাশিত: ৫:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
ছবি ধলাইর ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছর আগে নির্মিত সেঁতুর এর উপর দিয়ে ৪ বছর যাবৎ শুধু বাইসাইকেল আর মটরসাইকেল চলাচল করলেও, সেঁতুর দু’পাশে মাটি না দেয়ার কারণে কোন প্রকার ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। আর বর্ষা মৌসুম হলে সব ধরনের যানবাহন বাহনই চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
সেঁতুটি মৌলভীবাজরের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী জনগুরুত্বপূর্ন ঘোড়ামারা-শুকুর উল্লাহগাঁও ভায়া আদমপুর সড়ক। এই সড়ক দিয়ে দুই ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। আর সড়কে ধলাই নদীর উপর বিদ্যমান সেঁতুটি নির্মান কাজ সমাপ্ত হওয়ার ৪ বছর অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র সেঁতুটির দুই পার্শ্বের এপ্রোচ রোডের কাজ অসমাপ্ত থাকায় অত্র এলাকার শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের যাতায়াতে পোহাচ্ছেন চরম দূর্ভোগ। আবার সেঁতুটির দুই পার্শ্বের সংযোগ স্থলের মাটি ভেঙ্গে পড়ে কাঁচা সড়ক অতিরিক্ত সংকীর্ন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের সহজে যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গত ৪ বছর আগে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৯৬ মি. আরসিসি পিএসসি গার্ডার এই সেঁতুটি । নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পর বিগত ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ সেঁতুটির উদ্বোধন করেন সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. আলহাজ্ব মো. আব্দুস শহীদ এমপি।


সরজমিনে শুকুর উল্লাহগাঁও গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সুরমা বেগম, ছাদিকুর রহমান, জয়নাল আবেদিন, মোহামদ্দিন, আব্দুল কাদির ও আমজদ আলীর সাথে আলাপ কালে জানান, সেঁতুটির উদ্বোধনের সময় দু’পার্শ্বের এপ্রোচ রোডও খুব দ্রুতই পাকা করণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন সাংসদ। প্রায় ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি প্রতিশ্রুতিটি আলোর মুখ দেখেনি এই সেঁতুসহ সড়কটিতে । ফলে গ্রামীণ কাঁচা সড়কটিতে কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন এ সড়কে যাতায়াতকারী ২ ইউনিয়নে বসবাসকারী হাজারো লোকজন সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। বিশেষ করে বর্ষাকালীন সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের জরুরী চিকিৎসা বা প্রসব করানোর জন্য স্থাস্ব্য কেন্দ্রোগুলোতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদেরকে উভয়দিকেই প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা কাঁদে বহন করে রোগিদের নিয়ে গিয়ে যানবাহনে তুলতে হয়। এদিকে সেতুঁটির উপর দিয়ে কোন যানবাহন যাতায়াত না করায়, স্থানীয় কৃষকরা সেতুঁটিকে ধান শুকানোর জায়গা হিসাবে ব্যবহার করছেন।
কৃষক আব্দুল মন্নান, তমিজ উদ্দিন ও আব্দুস সালাম জানান, আমাদের এলাকার ৮০ শতাংশই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। ধান চাষের পাশাপাশি মৌসুমী ফসল উৎপাদনে কমলগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ অবদান রাখছে এই এলাকাটি। আমাদের মৌসুসী ফসল গুলো উপজেলা সদর সহ সারা জেলাই সরবরাহ করা হয়। তবে সেঁতুটি ব্যবহার করতে না পাড়ার কারণে ১ কিলোমিটারের রাস্তাটি তিনগুণ ভাড়া বেশী দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে তাদের উৎপাদিত ফসল সমুহ বাজারজাত করতে হচ্ছে। এতে করে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ ও বেড়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় বাজার মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাই এখন অনেক কৃষকই মৌসুমী ফসল উৎপাদন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়া এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্রীক হওয়ায় দর্শনীয় স্থান মাধবপুর লেইক ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি স্মরণীসহ বিভিন্ন দশর্নীয় স্থানগুলো প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। এতে তাদের একদিকে যেমন অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে তেমনি ভাড়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে ।


এদিকে অতিসম্প্রতি সড়কটির মাধবপুর অংশে একটি কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি যেন গ্রামবাসীর উপর মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ এর মতো। ভেঙ্গেপড়া কালভার্টটির উপর ফিসপ্লেট ফেলে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে এলাকার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ভেঙ্গেপড়া কালভার্টটির সংস্কার ও সড়কটি পাকা করন না হওয়াতে পোহাতে হচ্ছে দৃর্ভোগ। শিক্ষার্থী পারভিন বেগম, ছাদিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন এরাস্তা দিয়ে কলেজে যেতে হয় । কিন্তু রাস্তাটি নির্জন হওয়ায় ঝুঁকি চলতে হয় আমাদের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল কুমার সিংহের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, গত দু’বার সেঁতুটির একপাশে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাটি ভরাট করেছেন। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে মাটিগুলো সরে গিয়ে সেঁতুটি দুই মাথার এই অবস্থা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মৌলভীবাজার এলজিইডি কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এলজিইডি অফিসের লোকজন এসে রাস্তাটি মেপে নিয়ে গেছে, কিন্তু গত ৪ বছরেও কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, সড়ক ও সেঁতুটির বেহাল অবস্থা থাকায় এলাকাবাসীরা দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, রাস্তাটি পাকা করণ করা হলে দুই ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো একধাপ এগিয়ে যেত।

সানীয় সরকার (এলজিইডি) কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। রাস্তাটি সরু হওয়ায় এবং স্থানীয়রা জমি না দেয়ার কারণে আমরা কাজ করতে পারছিনা।সেতুঁটির দুই পাশে মাটি না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মাটি ভরাট করার কোন প্রকল্প নেই, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ করাতে পারেন।