‘আফসার সালেহ কেরামত নান্না ভাইকে যেমন দেখেছি’

প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০১৯
ছবি ধলাইর ডাক

খালিদ সাইফুল্লাহ: “এমন জীবন তুমি করিও গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।”

আলহাজ্ব আফসার সালেহ কেরামত নান্না; যাঁর এই পৃথিবীতে সোনার চামচ মুখ নিয়েই আবির্ভাব ঘটে। যাঁর বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকার অভিজাত গুলশান নগরীর কেরামত হাউসে। যিনি ১৯৬০ সালের কোনো তারিখে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের এক অভিজাত ও ধর্নাঢ্য কেরামত পরিবারে (মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী কেরামতনগরের কেরামত হাউস) জন্মলাভ করেন এবং ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভোর ৩.৪৫ ঘটিকার সময় ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

তাঁর পিতা দানবীর মরহুম মোঃ মুহিবুর রহমান (চেরাগ আলী); যিনি ছিলেন ১৯৬২ সালে আইউব খানের অবিভক্ত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ সদস্য (এম.এন.এ), কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ৫ নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ও সুদীর্ঘ ৩০ বছরকালীন নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান , কমলগঞ্জ পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন ও আজীবন চেয়ারম্যান এবং মাতা নূর-ই বেগম।

তাঁর পিতামহ উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানশীল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দানবীর মরহুম আলহাজ্ব কেরামত আলী ; যিনি ছিলেন একজন এমএলএ ও এমএনএ। হাজী আফসার সালেহ কেরামত নান্না ছিলেন একাধারে রাজনীতিক, দানশীল, গ্রাম্যসালিশ বিচারক, শিক্ষানুরাগী ও ক্রীড়ানুরাগীসহ বহুমূখী বিশেষণে বিশেষিত একজন মানুষ। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও মিষ্টভাষী এই মানুষটি অন্য আরও আট-দশজন মানুষের চেয়ে খানিকটা ব্যতিক্রমধর্মী-ই বটে।

সমাজের একদম শীর্ষ পর্যায়ে বসবাস করেও ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার মিথ্যা অহংকার বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি তাঁকে। তিনি মায়াবী মুখনিঃসৃত সহজসরল কথাবার্তা দিয়ে নিমিষেই মানুষের মন জয় করে নিতে পারতেন এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে অল্পসময়েই মিশে যেতে পারতেন, যা তাঁর মাঝে লুকায়িত এক ধরনের বিশেষগুণ। তাই ধনী-গরীব মানুষের মাঝে কিঞ্চিৎ পার্থক্য কখনই করতেন না। পিতা ও পিতামহের মতোই অত্র অঞ্চলের গরীব-দুঃখী মানুষকে নিয়ে হৃদয়ের গহীনে সুন্দর স্বপ্ন লালন করতেন এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের প্রয়োজনে সাধ্যমতো কাজ করতেন।

তিনি শিক্ষাজীবনে বি.এ.এফ. শাহীন কলেজ, ঢাকা থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন। হাজী আফসার সালেহ কেরামত নান্না’র পিতার মৃত্যুর পর ঐতিহ্যবাহী ভানুগাছ বাজার পৌরবণিক সমিতি, কেরামতনগর, কমলগঞ্জ এর সভাপতির পদ শূন্য হলে পৌরবণিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি হিসেবে বারবার ওই পদে নির্বাচিত হয়ে পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং আমৃত্যু অপরাজিত থেকে ওই পদে আসীন ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, কমলগঞ্জ পৌরসভা শাখার দীর্ঘদিন ও আজীবন সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কুমড়াকাপন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরামতনগর, কমলগঞ্জ ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে একাধিকবার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

কমলগঞ্জ উপজেলাধীন কেরামতনগরের কেরামত আলী মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির আমৃত্যু মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি আরও বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। হাজী আফসার সালেহ কেরামত নান্না দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। তিনি সাংসারিক জীবনে ঢাকার লালবাগের এক ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীর কন্যা হাজী জিনাত আফসার এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

তাঁদের তিন ছেলে যথাক্রমে রুমান আফসার ফাহাদ, মিনহাজ আফসার সাহাদ ও আবরার তাজুয়ার প্রিয়। হাজী আফসার সালেহ কেরামত নান্না আজ আমাদের মাঝে অনুপস্থিত; কিন্তু তাঁর কর্মগুলো আমাদের মাঝে চিরকাল থাকবে। পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দু’আ করি আল্লাহ যেনো ভাইকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান কর। আমিন।