কমলগঞ্জে পুলিশ সদস্য ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্যের জমির উপর ঘর নির্মাণের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৬:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২০
ছবি ধলাইর ডাক

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিন গোলের হাওর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মিছবর মিয়ার ক্রয়কৃত ৬ শতক জমি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দখল করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন তামিম মিয়া নামে স্থানীয় এক পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন। মিছবর মিয়ার জমি জোরপূর্বক দখল করে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে কমলগঞ্জ থানায় ও আদালতে দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেনা ভুক্তভোগী পরিবার।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিন গোলের হাওর গ্রামের মসুদ আলি মঙ্গলের পুত্র মিছবর মিয়া ১৯৭৬ সালে ৪৭২২ দলিলমূলে তার নানী মালিক নেছা বিবির কাছ থেকে দুই দাগে ৩২.৫০ শতক জমি ক্রয় করেন। বর্তমান যার আরএসএ খতিয়ান ১৮১ ও এসএ খতিয়ান ৪৪১ এর এসএ দাগ নং ৮৫৬ ও আরএস দাগ নং ১১৫৭ এর গুলের হাওর মৌজায় দুই দাগে ৩২.৫০ শতক জমি প্রতিয়মান। জমি ক্রয় করার কিছুদিন পর তিনি অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে জমিটি তার পিতা মসুদ আলি ও তার বোন গুলবাহারের নামে মাঠ ফর্সাসহ রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়। কয়েক বছর পর মসুদ আলিও মারা গেলে ওয়ারিসান সুত্রে জমিটির মালিক হন তার ছোট ছেলে লুৎফুর মিয়া তিনিই বর্তমানে জমি ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু বিগত দু’তিন বছর আগ থেকে তাদের খরিদা ওই জমির উপর লোলপ দৃষ্টি পড়ে তাদের পার্শ্ববর্তী বসবাসকারী আমিন আলির ছেলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগে কর্মরত ভূমিখেকো পুলিশ সদস্য তামিম মিয়া ও তার পরিবারের। এক পর্যায়ে তামিম গংরা মিলে খরিদা ৩২.৫০ শতক জমির এক পাশ থেকে ৬ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে । বাড়ি নির্মাণে বাঁধা দিলে দরিদ্র কৃষক লুৎফুর মিয়াসহ তার পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের পুলিশের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাদের তুলে নিয়ে পুলিশ এনকাউন্টার মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে দখল করে নেয়া জমিতে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেন ঐ পুলিশ সদস্য ও তার পরিবার। এ বিষয়ে লুৎফুর মিয়া কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ।

অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিছুর রহমানকে নির্দেশ দেন অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান । আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল তদন্ত করে ভূমি দখলের সত্যতার প্রমান পেয়ে উভয় পক্ষকে থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেন। গত ৬ মার্চ উভয় পক্ষ থানায় উপস্থিত হলে বিবাদী তামিম মিয়া ভূমি দখলের কথা স্বীকার করে তা ছেড়ে দেয়ার কথা বললে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন এএসআই আনিছুর রহমান।

বাড়িতে গিয়ে ভূমিটি ছেড়ে না দিয়ে রাতের আধারে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করলে ভূক্তভোগী লুৎফুর মিয়া গত ৯ মার্চ মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অনুপ্রবেশ বন্ধে মামলা দায়ের করেন।

বুধবার সকালে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভূক্তভোগী লুৎফুর মিয়া ও তার পরিবারের সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, বিষয়টি বিচার প্রক্রিয়াধীন থাকার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ সদস্য তামিম লোকবল নিয়ে জোর পূর্বক ভূমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে গেলে আমি বাধা দিলে,সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমি ও আমার পরিবারের উপর হামলা চালালে আমাদের আত্মচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাই। আমরা আজ সিলেটের ডিআইজি অফিসে এই পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবো।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দখলকারীর মা রীনা বেগম বলেন, ১৯৭৩ সালে আমার শশুড় সবিল মিয়া তার শাশুড়ি মালেক নেছা বিবির কাছ থেকে ১৫ শতক ভূমি খরিদ করেন। পরবর্তীতে মাঠ আমিন আমাদেরকে ২০ শতকের একটি মাঠ ফর্সা দেন।তাই সেই জমি ভোগ দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করছি। বাকি ৫ শতক জমি কোথা থেকে আসলো এ প্রশ্নের জবাবের কোন সদত্তোর দিতে পারেননি রিনা বেগম।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিছুর রহমান বলেন, জমি সংক্রান্ত ব্যাপারটি থানায় উভয়পক্ষ নিয়ে এসে সমাধান করা হয়েছে। এরপর আর কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি।