স্টাফ রিপোর্টার: “ফুল ফুটে ঝরে যায় দুনিয়ার রীতি, মানুষ মরে যায় রেখে যায় স্মৃতি” এই কথাটি’র সাথে আমরা সবাই কমবেশী পরিচিত। অত্যন্ত সাদা মাটা একটি উক্তি কিন্তু এটির মর্মার্থ অনেক বড়। মাত্র কদিন আগে যে মানুষ নিজের মুখে এই লাইন দুটি উচ্চারণ করেছেন আজ তিনি নিজেই পৃথিবী থেকে না ফেরার দেশে। কিন্তু রেখে গেছেন তার বিশাল কর্ম যজ্ঞ এবং স্মৃতি।
মানুষের বিশ্বাস এবং সৎ কর্ম যখন একাকার হয় তখনই মানুষ হয়ে উঠেন একজন মাহান মানুষ। ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে রেখে যান দীর্ঘস্থায়ী কর্মের স্বাক্ষর। আব্দুন নূর মাস্টার সাহেবের মৃত্যুর পর তার বিশাল জানাযা ই প্রমান করে তার বেঁচে থাকার কতো প্রয়োজন ছিল। যার প্রসঙ্গ আজ আমি অবতারণা করছি তিনি আজ আর মধ্যে নেই কিন্তু তার জীবন কর্ম ও স্বপ্নের কথা উল্লেখ না করলে আমাদের দেনা থেকে যাবে।
মৌলভী বাজারের কমলগঞ্জের একটি গ্রামীন জনপথের একজন মানব দরদী ব্যক্তি ছিলেন আব্দুন নূর মাস্টার। গত মঙ্গলবার ২৫ আগস্ট ২০২০ ইং আকস্মিক ভাবেই পরাপারে পাড়ি জমিয়েছেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে তিনি অবসরে ছিলেন। কিন্ত অবসর মানে বসে থাকা নয়, অবসরকে তিনি কর্মের সুযোগ হিসেবে বেঁচে নিয়েছিলেন। নিজ এলাকার শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছেন আমৃত্যু। তিনির স্মৃতিকে অম্লান করার জন্য এলাকায় মানুষ প্রতিষ্ঠা করেছে তার নামে “আব্দুন নূর-নূর জাহান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আব্দুর নূর মাষ্টার ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ১৯৭২ সাল থেকেই আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সমাজ কর্মের প্রতিই অধিকতর মনোযোগী হয়ে পড়েন। জনসেবার অংশ হিসাবে সমাজের বাদ বিবাদ নিষ্পত্তিতে শালিস বিচারক হয়ে উঠেন। একজন দক্ষ প্রথম সারির শালিস বিচারক হিসাবে জেলার বিভিন্ন থানায় জটিল বিষয় নিরসনে তিনির প্রয়োজনীয়তা সর্বজন স্বীকৃত। শালিস বিচারে ৮০ ভাগ বিরোধ-ই তার জীবনে নিষ্পত্তি হয়েছে। এলাকার আর্থসামাজিক তথা শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে তার অবদান চির স্বরণীয় হয়ে থাকবে। আব্দুর নূর মাষ্টার মেধা শ্রম দিয়ে জীবনের ধারবাহিতাকে অক্ষুন্য রেখে কমলগঞ্জের এক আলোকিত পরিবারে হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন। ব্যাক্তি পারিবারিক জীবনে আব্দুন নূর মাস্টার একজন সফল স্বার্থক ব্যক্তি। ৪ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। বড় ছেলে নজরুল ইসলাম দেশ থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রয়েল মার্সডেন ক্যান্সার রিসার্স হসপিটালে ইন্সিডেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। ছেলে রিপন ইসলাম ময়নুল, কমিনিটি নেতা ,ট্রাস্টি আব্দুন নুর নুরজাহান চৌধুরী কল্যাণ ট্রাস্ট, কাউন্সিলর ২নং পতন উষার ইউপি। ছেলে নাজমুল ইসলাম ইমন যুক্তরাজ্যের সান্দারল্যান্ড ইউনিভাসিটি থেকে BA (Hons) International Tourism and Hospitality Management উপর উচ্চতর ডিগ্রী করেছেন। নাজমুল ইসলাম ইমন যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কমিনিটি কাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং কাজ করছেন নন ক্লিনিক্যাল স্টাফ মোবিলাইজেশন সার্ভিস ম্যানেজার হিসাবে department of health care facilities লুইসাম গ্রীনিস NHS ট্রাস্ট যুক্তরাজ্য। ছোট ছেলে ডাঃ কামরুল ইসলাম শিপু MBBS নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজির লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন at the same time ডাঃ কামরুল ইসলাম শিপু IT advisor for North East Medical college, আব্দুন নূর মাস্টারের যোগ্য ছেলে ডাঃ শিপু মেডিকেলে ছাত্রাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ2আই প্রকল্পের “বেস্ট ইনোভেটিভ আইডিয়া” প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ইতোমধ্যে নুর মাস্টারের ছেলে ডাঃ শিপু যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে “ফান্ডামেন্টালস অব ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি’’এবং রাইস ইউনিভার্সিটি থেকে “ফান্ডামেন্টালস অব ইম্যুনোলজি’’ তে কোর্সের ফান্ডিংয়ে ডিস্টান্স লার্নিং এর মাধ্যমে কোর্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ,যুক্তরাজ্যের দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা থেকে “মাস্টার্স ইন্ ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিস” ডিগ্রিতে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন। মেয়ে শান্তা ইসলাম সিলেটে the স্কলার হোম ইন্টারন্যাশনাল পড়া শুনা করেছেন ,বর্তমানে স্বামীর সাথে যুক্তরাজ্যে বাস করছেন। আব্দুন নূর মাস্টারের পুত্রবধু ডাঃ তাহানি আল চৌধুরী নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিপার্টমেন্ট অব এনাটমির লেকচারার। আব্দুন নূর মাস্টারের তৃতীয় পুত্র বিলেতের তরুন রাজনীতিবিদ ও NHS worker নাজমুল ইসলাম ইমন আমার ভাগ্নি জামাই সেই সুবাধে তার বাবা মরহুম আব্দুন মাস্টার সম্পর্কে যৎ সামান্য জানা। শিক্ষার প্রচার প্রসার দান অনুদান সমাজের কল্যাণ মঙ্গল নিহিত কাজে নিজ ও নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন সম্মুখ সারিতে। এ যাবৎ দৃশ্যমান অনেক কাজ করেছেন। দেশ-সমাজের জন্য তার আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অদ্য ২৫/০৮/২০২০ ইং তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গিয়েছেন। শিক্ষানুরাগী আব্দুন আব্দুন নূর মাস্টারের আকর্ষিক চলে যাওয়া কমিনিটির জন্য ও অপূরণীয় ক্ষতি। শেষে আমি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, সেই সাথে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।
শফিকুল ইসলাম জার্নালিস্ট, পরিচালক ও উপদেষ্টা, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লন্ডন।