ধলাই ডেস্ক: আফ্রিকান লাংফিশ মাছটি অনেকের কাছেই পরিচিত। সারাবিশ্বের মানুষের কাছেই এই মাছ একটি বিস্ময়ের ব্যাপার। লাংফিশ কোনো রকম কোনো পানি ছাড়াই তিন থেকে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিতে পারে। এরা পুরো সময়টাই ঘুমিয়ে পার করে। এই সময় কোনো খাবার এবং পানি কোনো কিছুই প্রয়োজন পরে না এদের।
মাছের নাম বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে পানিতে বসবাসকারী একটি প্রাণীর নাম,যা পানিতে সাঁতরিয়ে চলে। পানির বাইরে যার বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠে। বর্তমানে পৃথিবীতে মাছের মধ্যে ব্যাপক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় । পৃথিবীতে আনুমানিক ৪২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে এবং সেই সংখ্যাটা দিনদিন বেড়েই চলছে। তবে এই মাছ চমক দিয়ে চলেছে বিশ্ববাসীকে।
গবেষকদের মতে, এই মাছের মধ্যে মূলত হাইবারনেটিং আছে। যে কারণে এরা দীর্ঘ সময়ের জন্য হাইবারনেটিং এ থাকে। প্রতিকূল পরিবেশে, পানির বাইরে শুকনো পরিবেশে এরা নিদ্রাযাপন করতে থাকে। দীর্ঘ সময়ের জন্য এভাবে ঘুমিয়ে থাকাকে হাইবারনেশন বলা হয়।
এরা বিশুদ্ধ পানির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সময়ের সঙ্গে স্পংগে এদের দেহও শুকিয়ে যায়, পাখনাও ভঙ্গুর হয়ে যায়। কিন্তু তখনও জীবন থাকে। বিশুদ্ধ পানি পেলে পূনরায় হাইবারনেশন ভেঙে উঠে পড়ে। আপনার দেখলে মনে হবে শুকনো কাঠ যেমন হয় দেখতে ঠিক তেমনটাই মনে হয়। মনে হতে পারে অনেক অনেক কাল আগের এই মাছগুলো রোডে হয়তো শুকিয়ে গেছে। এমনকি এতটাই মরমরে হয়ে যায় এদের শরীর। যে আপনি চাইলেই ভেঙে ফেলতে পারেন।
আফ্রিকান লাংফিশের দুটি ফুসফুস রয়েছে। লম্বায় ১৫/১৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এরা অন্যন্যা মাছের থেকে কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। এরা পরিণত বয়সে পশু পাখি এবং অন্যান্য স্থলজ প্রাণীদের মত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। প্রতিকূল পরিবেশে ঠিকে থাকতে এরা শরীর থেকে তরল জাতীয় এক ধরণের একটি পাতলা স্তর নির্গত করে যা শুকিয়ে একটি গুটির মত হয়ে যায় । এটি বছরের পর বছর পর্যন্ত এই গুটি হতে পানি গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে পারে। আফ্রিকান লাংফিস পানিতেও হাইবারনেশনে যেতে পারে । এগুলো শুকনো মৌসুমে কাদা-মাটিতে গর্তের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, এবং তারা তাদের দীর্ঘ উপাঙ্গ ব্যবহার করে পানি থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।
এটি পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরের অর্ধেক অঞ্চলে মিষ্টি পানির আবাসের বিস্তৃত অঞ্চলগুলোতে বেশি দেখা যায়। এরা যখন বুঝতে পারে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে তখন এটি জলপথের ১-৯ ইঞ্চি নীচে মাটি খনন করে। তারপর দেহ দিয়ে আশেপাশের মাঠিকে আন্দোলিত করে একটি বাল্ব-আকৃতির চেম্বার তৈরি করে এবং উক্ত চেম্বারে লাংফিশ এর নাকের দিকটিকে ঊর্ধ্বমুখীভাবে অবস্থান নেয়। যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন এরা মাটির নিচে এভাবেই অবস্থান করে এবং পুনরায় বর্ষার মৌসুম না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এই সময়টাতে এদের বিপাকীয় হার ধীরে ধীরে খু্ব কমে যায়। শরীরে তৈলাক্ত পদার্থ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্ঠি না থাকায় শরীর শুকিয়ে যায়। এভাবেই এরা ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আফ্রিকার লাংফিশ মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের পেছনের পাতলা অঙ্গগুলোকে ব্যবহার করে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আফ্রিকান লাংফিশের খাদ্য বৈচিত্রপূর্ণ। এগুলো ব্যাঙ,ছোট মাছ এবং মোলাস্কার পাশাপাশি গাছের শিকড় ও বীজও খাদ্যের তালিকায় রাখে। এগুলো ৭ ইঞ্চি থেকে ৪০ ইঞ্চি পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ওজন হয়ে থাকে প্রায় ৮ পাউন্ড পর্যন্ত। আফ্রিকার লাংফিশগুলোকে দ্বৈতশ্বাস ফেলা মাছ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অধিকাংশ অল্পবয়স্ক লাংফিশ গিলাকে ব্যবহার করে শ্বাস নেয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গিল ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হতে থাকে। তখন এরা বায়ু থেকে শ্বাস- প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে।