নজরুল ইসলাম: হুঙ্কার তর্জন গর্জন এই সব প্রতিবাদের ভাষা না। কথায় আছে “Tit for tat” “ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়”। আপনি যার সাথে যেমন ব্যবহার করবেন, ঠিক তেমন ব্যবহার পেতে প্রস্তুত থাকুন। আপনার নীতি ঠিক করুন, আপনার মনোভাব একটি ন্যায্য আদর্শ নৈতিকতা ধারা প্রতিফলিত করুন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করবে।
আলেম ওলামাদের প্রতি আমার যতাযত সম্মান শ্রদ্ধাবোধ আছে। আপনাদের প্রতি আমার অগাত বিশ্বাস আছে। হাজার হাজার মুসলিম উম্মাহ বিশ্বাসের সাথে আপনাদের কথা শোনেন। আমরা আপনাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি, আপনাদের কাছ থেকেই জানতে পারি ইসলাম কী বলে।
Covid 19 করোনা ভাইরাস মহামারি, মৃত্যের মিছিল অনিশ্চতা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যখন সারা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলেছে। সেই ক্ষনে প্রিয় বাংলাদেশে ভাস্কর্য হালাল নাকি হারাম এ নিয়ে মুখোমুখী সমর। আমরা শিক্ষিত স্বশিক্ষিত নাকি কান্ড জ্ঞানহীন যা আচার আচরণে প্রায়-ই প্রমান করতে ব্যর্থ হই। এই মহামারিতে ভাস্কর্য হালাল নাকি হারাম এই প্রশ্নে লাখ লাখ মানুয রাস্তায় মিছিল মিটিং, মহামারি ভীতি নেই বললেই চলে। আল্লাহ দেশের মানুযের সহায় আছেন।
পাঠক, ভাস্কর্য নিয়ে দেশ উত্তাল। ঠান্ডা মৌসুমে
রাজনীতির মাঠ গরম। তুমুল বিতর্ক চলছে। particularly বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে। সরকার যে কোনো মূল্যে ভাস্কর্য নির্মাণ করতে চায়। অন্য পক্ষ বঙ্গবন্ধু বিরোধী না ভাস্কর্য বিরোধী (স্পষ্ট হয়ে উঠেছে) তারা যে কোনো মূল্যে নির্মাণ ঠেকাতে চায়। বিতর্কের উত্তাপ দেশব্যাপী, সমাবেশ-মিছিল মিটিংয়ে কম্পিত রাজপথ। কেন এই বিতর্ক? এর মূল ভিত্তি কি? শিল্প-কলা, ধর্ম, রাজনীতি নাকি সবই। এথানে কি আবেগ কাজ করছে?
বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, যেহেতু এখানে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে আছে। আবার আলেম- ওলামাদের কাছ থেকে যেসব আপত্তি আসছে তা পর্যালোচনা করত: একটা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা ও এর যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা উত্তনের পথ নয় কি? এই ইস্যুটি নিয়ে একটি মুক্ত আলোচনা হতে পারতো। মাননীয় ধর্মমন্ত্রীর সাথে বসার ব্যবস্থা করা যেত। প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আলেম ওলামা ইসলামিক স্কলারস বসে আলোচনা করতে পারতেন। সম্মানিত আলেম সমাজ প্রশ্ন থেকেই যায় আপনারা কি এই সময়টুকু সরকারকে দিয়েছেন?
পাঠক, কোন বিযয় নিয়ে আপনার উদ্বেগ এবং একই সময় হুঙ্কার তর্জন গর্জন সমস্যার সমাধান নাও করতে পারে। আপনি সরকারকে অভিযোগ করলেন, সরকার পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আপনি আইন হাতে তুলে নিলেন। ভেঙ্গে দিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, কোটি মানুযের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ভালবাসার প্রতীক ,বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। আঘাত করে থেতলে দিলেন মুখ ভেঙ্গে দিলেন হাত। আপনাদের এহেন অযৌক্তিক হিংসাত্তক মূর্খ আচরণ বাংলাদেশে বিস্বাসী লোকদের বিস্মিত করেনি। কারন ১৯৭৫ সালে এই পরিবারের সকল সদস্যকে বুলেট বৃদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। ভাবছি, আমরা কেন এখনও মানুয হতে পারিনি। বড়ই অপমানিতবোধ করছি। ঘোলা পানিতে যারা মাছ স্বীকার করতে চান আমাদের মনে রাখতে হবে, অষ্টম শ্রেণি পাশ করা কোন ভদ্রমহিলা এই দেশ পরিচালনা করছেন না। ঘাত প্রতিঘাতে ক্ষতবিক্ষত চরাই উৎরাই পার করে মা বাবা ভাই বোন সব হারিয়ে দেশান্তর হয়ে আবার দেশে ফিরে এসে একটি সটিক নেতৃত্বের মাধ্যমে এই দেশের আপামর মানুযের ভালবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তার রাজনৈতিক লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা এবং এ দেশের দুঃখী মানুযের মুখে হাসি ফুটানো।
পাঠক, উগ্র বক্তব্য দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব শ্রদ্ধেয় মামুনুল হক যে ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যে ভাষায় লাশের পর লাশ ফেলার হুমকি দিয়েছেন, যে ভাষায় বঙ্গভবন গণভবন সংসদ ভবন রক্তে ভাসিয়ে দেয়ার হুঙ্কার দিয়েছে ইসলাম এসব কোনোভাবেই সমর্থন করে না। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আদর্শ ইসলামের সবচেয়ে বড় আদর্শ। ইসলাম এ ধরনের উগ্রবাদকে সমর্থন করে না। যৌক্তিক উদ্বেগ একটি দেশের যে কোন নাগরিকের উৎকণ্ঠার কারণ হতে পারে। সরকারের সাথে জনগনের যুক্তি তর্ক হতেই পারে, ইহাই গণতন্ত্র। এটা দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না।
সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ:- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে। এখানে কোনো ধর্মীয়পক্ষ- সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর কথায় পছন্দে দেশ চলবে না। দেশ চলবে তার মূলনীতিতে। এই দেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান শিয়া সুন্নী রক্ষণশীল উদার আস্তিক নাস্তিক মসজিদ মন্দির গীর্জা থাকবে ,আমরা সকলেই বসবাস করবো। রাষ্ট্র চলবে সংবিধান অনুযায়ী।
পাঠক, দেশের একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ইসলাম ধর্মের আলোকে ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে ভাস্কর্য কেন, বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলাও নিষেধ রয়েছে। সেখানে ভাস্কর্য হালাল হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ভাস্কর্য প্রশ্নে সমাজের আলেম-উলামাদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাওলানা মাসউদ বলেছেন ,আলেমদের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয়া কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম। দেখুন, একটা রাষ্ট্র তার সংবিধান অনুযায়ী চলবে। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে জোরজবরদস্তি করার কোনো অধিকার কারো নেই।
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে তো ভাস্কর্য আছে। তাহলে বাংলাদেশে থাকলে ক্ষতি কী? তাছাড়া আমাদের দেশের ভাস্কর্যগুলোর অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এসব ভাস্কর্য ইসলাম ধর্মের সাথে কি সাংঘর্ষিক? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাওলানা মাসউদ বলেছেন, অনেকে মুসলিম দেশগুলোতে নির্মিত ভাস্কর্যের উদাহরণ দিচ্ছেন। বিশেষ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো উদাহরণ হিসেবে সামনে এনে বলছেন, ভাস্কর্য হালাল। মনে রাখতে হবে, কোনো উদাহরণ দিয়ে ইসলাম চলে না। ইসলাম চলে, কোরআ-সুন্নাহ’র আলোকে। দেখুন, নামাজ পড়া ফরজ। তাই বলে কি সবাই নামাজ পড়েন? সবাই কি রোজা রাখেন? সবাই কি জাকাত দেন? অনেক মুসলমানই তো ইসলামের অনেক কিছুই মানেন না। তাতে করে সেগুলোকে বৈধ বলার সুযোগ নেই।
পাঠক,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন উদার চেতনার অধিকারী একজন মুসলমান। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা ও তার সরকার দেশের আলেম ওলামাদের প্রতি অনেক আন্তরিক। তিনি তাদের সুখে দুখে পাশেই ছিলেন, আছেন। প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা বলেছেন, কওমি মাদ্রাসায় এতিমরা পড়ে। এর থেকে বড় কাজ আর কি হতে পারে। আপনাদের স্বীকৃতি না দিয়ে কাদের দেবো? বলেছেন, একটা শিক্ষা ব্যবস্থা তখনি পূর্ণ হয় যখন ধর্মীয় শিক্ষা সংযুক্ত হয়। এই ছেলেরা কোথায় যাব , তাই এ স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রি শুধু স্বীকৃতি দিয়ে বসে থাকেননি , আইন করে দিয়েছেন যেন কেউ তা আর বন্ধ করতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা ইমাম মোয়াজ্জিনদের কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছেন যাতে তারা সুবিধা ভাতা নিতে পারেন। মসজিদে শিশু শিক্ষা করে দিয়েছেন। উপনুষ্ঠানিক শিক্ষা ৮০ হাজার আলেমের কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন। ৫৩৬ টা মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। ইসলামি সংস্কৃতি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বায়তুল মোকাররমে নারী পুরুষের ইবাদাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্বীনের শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাবে কোন সন্দেহ নেই।
প্রধানমন্ত্রি বলেছেন, এদেশে সন্ত্রাসের ঠায় নাই। আমাদের দেশ হবে শান্তির দেশ। ইসলাম ধর্মের সবাইকে ঢালাওভাবে জঙ্গি বলা যাবেনা। সন্ত্রাসীরাদের ধর্ম নেই। সত্যিকারের ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীরা জঙ্গি হতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এইসব অপপ্রচারে বিশ্বাস করবেন না। নবীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার হলে বিচার হবে আইন মোতাবেক। কেউ আইন হাতে তুলে নিবেন না। আফসোস আমরা বিচার প্রাথী হয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে আঘাত করে শেখ মুজিবের ভাস্কর্যর মুখকে থেতলে দিলাম হাত ভেঙ্গে দিলাম।
পাঠক, প্রবাদ আছে কৃষ্ণ করলে লীলা খেলা আর আমরা করলেই ঢং। দেশ স্বাধীনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তি বিশেযের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। যা নিয়ে কখনো কারো মাতা ব্যথার কারন না হলেও সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ওপর ভাঙচুর উগ্র বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম সহ দেশের কয়েকটি ইসলামী দল। সমস্যা ভাস্কর্য নিয়ে নয়, সমস্যা বঙ্গবন্ধু নিয়ে। বঙ্গবন্ধু নাম শুনলে এখনো একটি গোষ্ঠীর গা দাহ করে। স্ব-পরিবারে মেরে ফেললেন দেশের স্থপতিকে। তিনির স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আলোচনার দ্বার খোলা ছিল, তা ব্যথিরেখে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হল। যারা মনে করছেন সরকার মাজা ভাঙ্গা দেশের তথা কথিত সেই রাজনৈতিক দলের মত তারা ভুল করছেন। সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে একটি গোষ্ঠী প্ররোচিত করছে।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এই জাতি যে এতটা অকৃতজ্ঞ তা তিনি ভাবেননি। আমরা লজ্জিত আপনার তরে। এমন অকৃতজ্ঞতা বোধ জগতে আর কি হতে পারে ? ওরা কেমন করে এতটা নির্বোধ?
পাঠক,আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড আমেরিকা প্রবাসি লেখক বশির আহমদ ভাস্কর্য ইস্যুতে আমার মনের কথা লিখেছেন যা ইতিমধ্যে আমি অবতারনা করেছি। আবারও তিনির কন্ঠে কন্ঠে মিলিয়ে আলেম ওলামাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে যা বলে শেয করতে চাই, হাট-ঘাট-মাঠ গরম করার অপচেষ্টা না করে হক্কানি আলেম-ওলামারা সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে দাবিনামা হস্তান্তর করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে দলিল পেশ করে দাবি জানাতে পারেন। হক্কানি আলেম- ওলামা সহ যে কারো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। ভাস্কর্য ইস্যুতে একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে যারা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া। এখানে বাজার গরম করার কিছু নেই। সরকার পরিবর্তনের জন্য দরকার সাহসী নেতৃত্ব। দরকার রাজনৈতিক ইস্যু, সামাজিক বা ধর্মীয় ইস্যু নয়।
লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।