ধলাই ডেস্ক: এবার নোয়াখালীর কবিরহাটে ৪১ বছর বয়সী নারীকে অর্ধনগ্ন করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীর দ্বিতীয় স্বামীকেও অর্ধনগ্ন করা হয়। এছাড়া তাদের ঘর থেকে লুটে নেয়া হয় টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস।
২৬ জুলাই উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। তবে ভয়ে এখনো মামলা করেনি ভুক্তভোগীর পরিবার। আতঙ্কে তারা নিজ ভিটা ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২৬ জুলাই এ ঘটনা ঘটে। ধামাচাপার বিষয় নেই। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ঘটনা আমাকে বলেছেন। ওই নারীর স্বভাবচরিত্র জানতে হবে।
অভিযুক্তরা হলেন- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই ৩২ বছরের আবু বক্কর ছিদ্দিক তানভীর, একই ওয়ার্ডের ৩২ বছরের ওমর ফারুক, ৩০ বছরের রাজন ও আজু মিয়ার বাড়ির ২৫ বছরের মো. আলতাফ।
গৃহবধূর ১৮ বছরের মেয়ে অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে ঘরেই ছিলেন সবাই। এ সময় আমাদের ঘরের দরজায় লাথি মারেন তানভীর, ফারুক, রাজন, আলতাফ ও তাদের অনুসারীরা। দরজা খুলে দিলে তারা ঘরে ঢুকে গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামীকে বেধড়ক মারধর করে আট হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ছিনিয়ে নেন। এরপর দুই লাখ টাকা দাবি করেন তারা।
টাকা না দেওয়ায় গোয়ালঘর থেকে আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা দামের বাছুরসহ একটি গাভী লুটে নেন তারা। একপর্যায়ে আমাকে ও আমার বোনকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে আমার মাকে অর্ধনগ্ন করেন। পরে ভিডিও ধারণ করে চলে যান। এরপর থেকে ভয় ও আতঙ্কে আমরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে থাকছি।
তিনি আরো বলেন, আমার বাবার সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর কামালকে বিয়ে করেন মা। বাবা বৃদ্ধ হওয়ায় আমরা তাকে ছেড়ে যাইনি। কামাল, মা, বাবা, ভাই-বোন আমরা সবাই একসঙ্গে থাকছি। তিন মাস আগে কামাল চাচার সঙ্গে আমার মায়ের বিয়ে হয়। কিন্তু সামাজিকভাবে বিষয়টি কাউকে জানানো হয়নি।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ঘটনার পর স্থানীয়রা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। একই সঙ্গে মেরে ফেলারও হুমকি দেন। প্রাণে বাঁচতে কামাল, আমার মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছি। ভয়ে আমরা কারো কাছে অভিযোগ করিনি। অভিযোগ করলে তারা আমাদের মেরে ফেলবে।
অভিযুক্ত আবু বক্কর ছিদ্দিক তানভীর বলেন, ওই নারী একই বাড়িতে দুই স্বামীর সঙ্গে থাকছেন। এ কারণে স্থানীয়রাসহ আমরা তাদের ধরে বিষয়টি ইউপি সদস্যদের জানাই। ভিডিও ধারণ, টাকা, মোবাইল ও গরু লুটের সঙ্গে আমি জড়িত নই।
এ বিষয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ঘটনা শোনার পর সেখানে গিয়েছিল পুলিশ। ওই নারীর চরিত্র খারাপ বলে আমাদের জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার। তিনি দুই স্বামী নিয়ে একই ঘরে বাস করেন। ওই নারীকে থানায় আসতে বলেছি। তার কাছ থেকে শুনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়। সে ভিডিও ৪ অক্টোবর ফেসবুকে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে।