একজনের বরাদ্দকৃত সরকারী ডিপটিউবওয়েল অন্যের কাছে হস্তান্তর
এম,এ ওয়াহিদ রুলুঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জালাল আহমেদের বিরুদ্ধে স্থানীয় এমপির ডিও লেটার জালিয়াতির মাধ্যমে একজনের নামে বরাদ্দকৃত ডিপ টিউবওয়েল অন্যজনের কাছে হস্তান্তরের একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৭ জুন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও জেলা প্রসাশক মৌলভীবাজার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করা হয়। তাছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুলিপি পাঠানো হয় প্রকৌশলী, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কমলগঞ্জ, সভাপতি/সম্পাদক, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব, সভাপতি/সম্পাদক, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব, সভাপতি/সম্পাদক, কমলগঞ্জ উপজেলা সাংবাদিক ফোরাম এর নিকট।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের লোকমান মিয়ার স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়েছে-
‘তাহার বসত বাড়ীতে আর্সেনিক মুক্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় সরকারীভাবে ডিপ টিউবওয়েল পাওয়ার জন্য কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জালাল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন-সরকারীভাবে ডিপ টিউবওয়েল পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এবং দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। যদি কিছু খরচ করতে পার তাহলে অন্যের নামে বরাদ্দকৃত ডিও তোমাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেত পারি। কত টাকা ও কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে জালাল আহমেদ বলেন, অফিসের বিভিন্ন টেবিলে অফিসারদের খরচাপাতি বাবদ ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা লাগবে। আমি সরল বিশ্বাসে অফিসে উপস্থিত হইয়া ৪০,০০০/-(চল্লিশ হাজার) টাকা প্রদান করি, টাকা প্রদান করার পর আমাকে কয়েকমাস বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দিব দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করেন। কালক্ষেপন করার কারণে উনার সাথে আমার বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে টিউবওয়েল না দিলে আমার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলি, পরদিন ডিপ টিউবওয়েল বসানোর জন্য অফিস থেকে মালামালসহ বোরিং মিস্ত্রী নিয়ে আমার বাড়ীতে আসেন। ৭ দিন কাজ করার পর ৭০০-৮০০ ফুট গভীরতার স্থলে ৩২০ ফুট গভীরে নলকুপ স্থাপন করেন। ৩২০ ফুট গভীরে ডিপটিউবওয়েল স্থাপন না করার অনুরোধ করলে জালাল আহমেদ বলেন, এখানে বাদামী কালারের বালু পাওয়া গেছে, ডাবের পানির মতো পানি হবে। আর্সেনিকযুক্ত পানি উঠলে পুনরায় বিনাখরচে আরেকটি ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে দিব। পানি ব্যবহার অনুপযোগী ও আয়রুনযুক্ত। এ বিষয়ে উনার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোন সুরাহা পাইনি। পরবর্তীতে জানতে পারি সরকারী বরাদ্দ হতে টিউবওয়েল পেতে মাত্র ৭,০০০/-(সাত হাজার) টাকা খরচ হয়। স্থানীয় এম,পির ডিও এর মাধ্যমে ডিপ টিউবওয়েল সরকারীভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন। এর মধ্যেও তাদের কাছ থেকে ৭,০০০/-(সাত হাজার) টাকার পরিবর্তে ৮,০০০-৯,০০০ টাকা নিয়েছেন জালাল আহমেদ। ঠিকাদার কর্তৃক মিস্ত্রীদের খাবার সরবরাহের কথা থাকলেও গ্রাহকের উপর চাপিয়ে দেন ফলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। উপজেলা প্রকৌশলী মো: পনিরুজ্জামান এর যোগসাজশে জালাল আহমেদ এম,পির ডি.ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫,০০০-৪০,০০০ টাকা নিয়া একজনের নামের বরাদ্দ অন্যজনকে দিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তর করে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করছেন। যা সরজিমন তদন্তে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমি দুর্নীতির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানোনার কথা বললে সে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং বলে আমি ৫০টির উপরে ডিপ টিউবওয়েল বিক্রি করেছি। আমি একা টাকা খাই না, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবাই টাকা খায়। স্থানীয় অফিসে কোন সুরাহা না পাইয়া আপনার শরনাপন্ন হইলাম। আমি গরীব অসহায় অনেক কষ্ট করে ধারদেনা করে টাকা গুলো পরিশোধ করেছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী জালাল আহমেদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো: পনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ রকম কোন অভিযোগ আমার কাছে আসে নি। এ বিষয়ে আমি জানি না। যদি আমার অফিসের কেউ এরকম করে থাকে তাহলে সেটা তার বিষয়।’
কমলগঞ্জ উপজেলা বিআরডিবি চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বলেন, বালিগাঁওর লোকমান মিয়া নামের কাউকে ডিওলেটার দেয়া হয়নি। এমপির ডিও লেটার জালিয়াতির বিষয়টি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, ‘বর্তমানে আমি ঢাকায় আছি। যদি আমার অফিসে এরকম কোন অভিযোগ আসে তাহলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।