নজরুল ইসলাম: ওবিই (OBE) অর্ডার অব দ্যা ব্রিটিশ এম্প্যায়ার সম্মাননার জন্য ব্রিটিশ বাংলাদেশী শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর নাম ব্রিটেনের রানীর জন্মদিনে তালিকা ভুক্ত হয়েছে। স্যার ক্যাপ্টেন টম ম্যুরের দৃষ্টান্ত অনুস্মরণ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম তার বাড়ির বাগানে হাঁটা শুরু করেছিলেন। চ্যানেল এস টেলিভিশনের RFC প্রকল্পের জন্য জাস্ট গিভিং পেইজ ও টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দবিরুল ইসলামের সংগৃহিত অর্থের পরিমান ৪ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড যা বাংলাদেশের ৪ কোটির অধিক সমপরিমান টাকা। COVID-19 করোনা কালীন সময়ে রোযা রেখে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহের এমন উদাহারন স্থাপনের জন্য দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অদ্য OBE অর্ডার অব দ্যা ব্রিটিশ এম্প্যায়ার সম্মাননার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়।
শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর বৃটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অভিনন্দন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী ও চ্যানেল এস টিমকে। অভিনন্দন একি সময়ে বৃটিশ বাংলাদেশি ( OBE) অর্ডার অব দ্যা ব্রিটিশ এম্প্যায়ার সম্মাননা খেতাব অর্জনকারী সবাইকে। আপনাদের এমন অর্জনে আমরা গর্বিত।
শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম চৌধুরীরে মাধ্যমে ব্রিটিশ-বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্প্রচারক চ্যানেল এস পরিচালিত রমজান পারিবারিক প্রতিশ্রুতি (আরএফসি) কোভিড -১৯ সংকট উদ্যোগের অংশ হিসাবে মোট উত্থাপিত আদায়ের মধ্যে প্রায় ১১৬,০০০ ডলার ( NHS) ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ ৫২ টি দেশে ৩০ টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। we are simply proud about শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে। Less talk, more work “কথা কম কাজ বেশী। চার কোটির অধিক পরিমান টাকা raise করার পর দবিরুল ইসলাম চৌধুরী কম কথাই বলেছেন। বলেছেন, ‘আমি যে প্রচেষ্টা করেছি তার জন্য তারা আমাকে সম্মানিত করেছে বলে আমি গর্ববোধ করি। বলেছেন, আমি আমার হৃদয়ের গহীন থেকে প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। পাঠক, বয়স যে শুধু শুধু একটি নাম্বার তা শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম প্রমান করেছেন কাজের মাধ্যমে।
ভাল কাজের কোন দেওয়াল নেই, ইচ্ছে শক্তি দেশপ্রেম সামাজিক দায়বদ্ধতা এসব একজন মানুযকে সামনে ঠেলে দেয়, যা দবিরুল ইসলাম করে দেখিয়েছেন।আমি ম্যানেজমেন্টের ছাত্র তাই বিস্বাসে অনড় কর্মস্পৃহার উৎসমূল হচ্ছে প্রেরণা ও উৎসাহ যা মানুযের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এর মাধ্যমে যে কাউকে বিকশিত করা সম্ভব। কেউ ভালো কাজ করলে তাকে উৎসাহিত করা উচিত। মানুযের ভাল কাজকে উৎসাহিত করলে অন্যরাও উৎসাহ পায়। পদক সম্মাননা একজন মানুষের ভাল কাজের স্বীকৃতি। সমাজ বা রাষ্ট্র ভাল কাজকে উৎসাহিত করতে পদক বা সম্মাননা প্রদান করে। যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে inspire করে। সামনের দিনগুলোতে আরো ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করে।
তাই আমি মনে করি, একজন মানুষকে যদি সমর্থন জানাতে হয়, স্বীকৃতি দিতে হয়- তাহলে তাঁর জীবদ্দশায় তা দেয়া উচিত। মৃত্যুর পর এ জাতীয় স্বীকৃতির তেমন গুরুত্ব থাকেনা। তবে দেরীতে হলেও কাজের ‘মরনোত্তর’ স্বীকৃতি অন্য মানুষকে ভাল কাজে অনুপ্রাণিত করে তা অস্বীকার করতে পারছিনা। পাঠক, কারো কাছ থেকে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি আদায়ের জন্য ব্যক্তির ক্ষমতায়ন হচ্ছে -অনুপ্রেরণা। অনুপ্রেরণা ছাড়া যে কারো অন্তর্নিহিত সক্ষমতা পূর্ণতা পায় না।
বাংলাদেশে আমাদের লোকদের শক্তি ও ক্ষমতার ওপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। আমাদের লোকদের রয়েছে অসাধারণ দক্ষতা অনুধাবন ক্ষমতা। সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে সমাজে সুখ শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জনগন এ সমাজেরই অংশ সুতরাং সবচেয়ে বড় প্রয়োজন তাদের জীবনে সুখ শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কেননা জনগন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে। বাবার কৃতিত্বের কথা বলতে গিয়ে দবিরুল ইসলাম চৌধুরির পুত্র আতিক চৌধুরি বলেছেন, আমাদের ভাল কাজের জন্য বাংলাদেশে আমরা তেমন স্বীকৃতি পাই না, তাই আমার বাবার সাফল্যের পেছনে অবদানকারী সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। পাঠক, সাফল্যে ভরপুর সফল আমাদের সমাজের যাঁরা নিজ উদোগে ভাল কাজ করছেন এমন লোকদের খুঁজে বের করে তাদের সাফল্যের গল্প অন্যদের শুনালে আমরা সকলি উৎসাহিতবোধ করতাম। বাংলাদেশে ব্যক্তি বিশেষ যথাযত কর্তপক্ষ যারা সরকারের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত এই বিষয়টিতে তাদের অবেহেলা আকাশচুম্বী। সরকারী কর্মকর্তাদের সেবা প্রদানে কাস্টমার সাভির্স নাজুক। মানুষের ভাল কাজকে উৎসাহিত করতে গিয়ে যে প্রক্রিয়া সেখানে প্রতিযোগিতা থাকবে, থাকবে না স্বজনপ্রীতি। অনেক সময় দেখা যায় ব্যাক্তি বিশেষ রোদ বৃষ্টি ঘামে শ্রমে নিজ উদ্যোগে সমাজের কল্যানে দেশের স্বার্থে কাজ করেছেন বছরের পর বছর। দেখা গেল এমন লোকদের উৎসাহিত না করে যে কিছুই করে নাই, সারা বছর জুড়ে সম্পৃক্ত ছিল অন্যায় অনিয়ম স্বজনপ্রীতিতে, আত্মসাৎ করেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ,মেরে খেয়েছে গরীবেরে হক – এমন লোকদের চন্দ্রিমা উদ্যানে বা শেরাটন হোটেলে অনাড়ম্বর সম্ভধনা দেওয়া হচ্ছে যা সত্যি অনভিপ্রেত।
উল্যেখ্য, দবিরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৪০ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশ আসামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে ইংলিশ সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। তিনি একজন দক্ষ কবি এবং তাঁর নিজের লেখা হাজারের উপর কবিতা প্রকাশ করেছেন। বৃটিশ সরকার তার দেশের নাগরিদের প্রতি যেভাবে সুযম দায়িত্ববোধ কৃতজ্ঞতাবোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশে তার অনুকরণ ও প্রতিফলন প্রয়োজন। দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর মত অনেক লোক বাংলাদেশে ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। দৃশ্যমান সত্য যে রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃতজ্ঞতাবোধ জানানো দুরে থাক, স্থানীয়ভাবে তারা অবহেলিত প্রতিহিংসার স্বীকার। এতে করে অনেক দেশপ্রেমিক লোক ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করতে গিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এ ব্যাপারে সরকার যথাযথ মন্ত্রনালয় দায়িত্বশীলদের যথাযথ উদ্যোগে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।
নজরুল ইসলাম
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট ওয়ার্কিং ফর ( NHS) ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস, লন্ডন।
মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম