কমলগঞ্জ সংবাদদাতা: সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কথা ও সময়সীমা থাকার পরও তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষকদের ফিরিয়ে দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে খাদ্য গোদামে ব্যবসায়ীদের ধান গ্রহন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি বিভাগ ও খাদ্য গোদাম কর্তৃপক্ষ মিলিতভাবেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুবিধা গ্রহনে অনিয়মের করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কিনিছেন বলে বঞ্চিত কৃষক ও ইউপি চেয়ারম্যান এ অভিযোগ করেছেন। খাদ্য গোদাম কর্তৃপক্ষ ও কৃষি কর্মকর্তা অনিয়ম করেননি বলে দায়সারা জবাব দিয়েছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক উত্তরভাগ গ্রামের সানুর মিয়া, উত্তর ভানুবিল গ্রামের সুরেন্দ্র সরকার, ভানুবিল গ্রামের মাছিম আলী, মধ্যভাগ গ্রামের আজিজ খান ও কোণা গাঁওয়ের সেলিম রাজা অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সরকারি গোদামে ধান বিক্রির জন্য তাদের ১৮ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। তারা ১৮জন কৃষক ১৮ মে:টন ধান কমা করার কথা। তালিকা অনুযায়ী ১৮ জন আদমপুর ইউনিয়ন থেকে গেলে কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের ভানুগাছ খাদ্য কর্র্তপক্ষ এ তালিকা থেকে ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া, ভানুবিল গ্রামের মুসলিম আলী ও আধকানী গ্রামের শাহাবুদ্দীনসহ মোট ১০ জনের কাছ থেকে ১০৪০ টাকা মন দরে ধান ক্রয় করেন। আর ৮জনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কৃষকরা আরও বলেন, ফিরিয়ে দেওয়া ৮ জন কৃষকের বদলে নগদ সুবিধা গ্রহন করে ৮জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধান গ্রহন করা হয়েছে।
আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন এবার সারা উপজেলা থেক ১৭৮ মে:টন ধান কেনার টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে আদমপুর ইউননিয়ন থেকে ১৮ মে:টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গত ১০ জুলাই তাকে (চেয়ারম্যানকে) পত্র দিয়ে কৃষকের তালিকা দিয়ে ধান জমার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি প্রকৃত কৃষকের তালিকা করে মোট ১৮ জনের নাম কৃষি অফিসে পাঠিয়েছিলেন ১৮ জুলাই। ধান ক্রয়ের সর্বশেষ তারিখ ছিল ৩১ আগষ্ট। তালিকাভুক্ত কৃষকরা ২৩, ২৪ ও ২৫ জুলাই ধান নিয়ে ভানুগাছ খাদ্য গোদামে গেলে ১৮ জনের মাঝ থেকে ১০ জনের ধান গ্রহন করে বাকি ৮জনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যান আবদাল আরও বলেন একটি সিন্ডিকেট করে কৃষি বিভাগ ও খাদ্য গোদাম কর্তৃপক্ষ তার ইউনিয়ন থেকে ৮ মে:টন ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনিছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলবেন ও আগামী সমন্বয় সভায়ও উপস্থাপন করবেন বলে জানান।
কমলগঞ্জ খাদ্য গোদাম কর্মকর্তা সবিতা রানী দেব এ প্রতিনিধিকে বলেন, আদমপুরের তালিকাভুক্ত কৃষকরা ধান জমা করতে বিলম্ব করছিল। খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে যে কৃষকরা আগে আসবে তাদের ধান গ্রহন করা হবে। সে হিসেবে আদমপুরের পিছিয়ে পড়া ৮ জন কৃষকের স্থলে তালিকাভুক্ত আরও ৮ জন কৃষকের কাছ থেকে ৮ মে:টন ধান কেনা হয়েছে।
এখানে কোন অনিয়ম করা হয়নি। সময় সীমা ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত থাকলেও কেন তড়িগড়ি করে আদমপুর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ৮ জন কৃষকের ধান গ্রহন না করে নতুন করে চেয়ারম্যানের তালিকার বাইরের ৮জনের কাছ থেকে ধান কেনা হল ? এ প্রশ্নের সঠিক জবাদ দিতে পারেনি খাদ্য গোদাম কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ সম্পর্কে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ধান ক্রয়ে কোন অনিয়ম হয়নি। তিনি দায়সারাভাবে বলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ধান গ্রহনের শেষ মেয়াদ ছিল ৩১ জুলাই। আদমপুরের কৃষকরা ধান জমা করতে বিলম্ব করছে দেখে বাদ পড়া ৮ জনের স্থলে নতুন করে ৮ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৩, ২৪ ও ২৫ জুলাই পরপর ৩ দিন খাদ্য গোদামে গেলে কেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হলো প্রশ্ন করা হলে কৃষি কর্মকর্তা সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
কমলগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে তিনি কথা বলবেন বলেও জানান।