
স্টাফ রিপোর্ট : কমলগঞ্জ উপজেলার ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) পাত্রখোলা চা বাগানে শ্রমিক-পঞ্চায়েত দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৪ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর সোমবার চা পাতা উত্তোলন না হওয়ায় একদিনে বাগানের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ঘরের সংস্কারের দাবি করায় ১৫ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত ১ জন কে বরখাস্তকে কেন্দ কর্রে ও ঘর মেরামতসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ চা বাগানের অফিস এলাকায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এক পর্যায় পুলিশের উপস্থিতিতেই সাড়ে ১২ টার দিকে সংঘর্ষ বাধে।পরিস্থিতি নিযন্ত্রণ করতে না পারায তাৎক্ষনিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চা বাগানে শ্রমিকদের জরাজীর্ণ ঘরসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ম্যানেজারের সাথে আলোচনার সময়ে পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দের সাথে সাধারণ শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময়ে চা বাগানের শ্রমিকদের পক্ষে প্রতাপ গড় (৩৮), স্বরসতি মাহালি (৫৫), ও পঞ্চায়েতের পক্ষে সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী সিপন (৩৩) তারা মিয়া (৪৫), আহত হন। এদের মধ্যে প্রতাপ গড় ও স্বরসতি মাহালিকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়, অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। দুপুর পর্যন্ত চা বাগানে উত্তেজনা থাকায় সোমবার পাতি উত্তোলনসহ বাগানের উৎপাদন কাজ বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অভিযোগ করে মাখন ছত্রী, আমিনুল ইসলাম, দুলাল ছত্রী, আয়ুব মিয়া, গোপাল কূর্মীসহ অর্ধ শতাধিক শ্রমিক বলেন, চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী সিপন চা বাগানটিকে অত্যাচার করে রাখছে। সভাপতিকে না বলে কিছুদিন পূর্বে শ্রমিকরা ম্যানেজারকে ঘর মেরামতের দাবি করায় বাগানের নিরীহ ১৬ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করেন। তাদের মধ্যে একজনকে ৯০ ধারায় বরখাস্ত করা হয়। তারা আরও বলেন, প্রত্যেক স্টাফদের কাছ থেকে সভাপতিকে চাঁদা দিতে হয়, এমনকি টমেটো চাষীদের কাছ থেকেও তিনি চাঁদা আদায় করেন। শ্রমিকরা টাকা না দিলে ঘর মেরামত হয় না। সাহেবের সাথে সুসম্পর্ক রেখে তিনি বাগান থেকে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাত্রখোলা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী সিপন বলেন, শ্রমিকদের ঘর মেরামতসহ নানা দাবী নিয়ে সকালে ম্যানেজারের সাথে কথা বলার কারণে নির্বাচনে প্রতিপক্ষকরা কথা কাটাকাটির পর হামলা চালায়। চাঁদা আদায়সহ এ ধরণের কোন অভিযোগ নেই।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমানসহ পুলিশের একটি দল, এএসপি সার্কেল আশফাকুজ্জামান, উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলাইভ্যালী সভাপতি ধনা বাউরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। উভয় পক্ষের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে বাগান ব্যবস্থাপনা পক্ষ ও আন্দোলিত চা শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌছা গেছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী রবিবার কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদে বসে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
পঞ্চায়েত ও শ্রমিকদের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সত্যতা নিশ্চিত করে পত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের বরখাস্তের কোন ঘটনা ঘটেনি। যেটা হয়েছিল আগেই তা সমাধান হয়েছে। এখন তাদের দু’পক্ষ একে অন্যের মধ্যে সমস্যা নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এ ঘটনায় আজ বাগানে কোন কাজ হয়নি তাতে ন্যাশনাল টি কোম্পানীর প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।