কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: কুমিল্লার ঘটনার জেরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৮টি পূজামন্ডপে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত পরিচয়সহ প্রায় ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মইদাইল পূজামন্ডপের দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আসামী মাওলানা আব্দুল করিম (৪০)কে পুলিশ আটক করে গত শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে কামারছড়া চা বাগান মÐপ কমিটির দায়েরকৃত মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তারেকুল ইসলাম (২৪) নামে একজনকে গ্রেফতার করে রোববার সকালে মৌলভীবাজার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শন সুরুজ আলী ও ফয়েজ আহমদ দুইজন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে আলীনগর ইউনিয়নের ও কামারছড়া চা বাগান মÐপ কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিমা ভাংচুরের মামলায় কোন আসামীকে গ্রেফতার না করায় গত শনিবার সকালে কামারছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান করার আগে এক ঘন্টা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ রোববার দিনভর কমলগঞ্জ উপজেলার আক্রান্ত মন্ডপগুলো পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব এবং উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস জানান, শান্তির জনপদ কমলগঞ্জ উপজেলায় এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা দেশের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি চায় না। দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া গেলে এই নৈরাজ্য আরো বাড়বে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান দুটি মামলায় ২ জন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষনিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, কুমিল্লায় পুজামÐপে কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে গত বুধবার সন্ধ্যার পর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা এঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। এসময়ে বিক্ষুব্ধ জনতা মইদাইল সার্বজনীন পূজামন্ডপ ও কামারছড়া চা বাগান পূজামন্ডপের প্রতীমা ভাংচুর করে। এছাড়া বৃন্দাবনপুর জগন্নাথ জিউর আখড়া পুজামÐপ, বৈরাগির চক সার্বজনীন পুজামÐপ, রামপুর সার্বজনীন পুজা মÐপ, নারায়নক্ষেত্র শব্দকর একাডেমী পুজামÐপ, রহিমপুর ইউনিয়নের শ্রীঘড় পুজামÐপ ও সর্বশেষ রানীরবাজারের সার্ব্বজনীন পূজামন্ডপের ডেকোরেশনকৃত গেট ভাঙচুর করা হয়।
রাতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো: খলিলুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া আক্তার, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আছলম ইকবাল মিলন, সাধারণ সম্পাদক এড. এএসএম আজাদুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, পৌর মেয়র জুয়েল আহমদ, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পংকজ রায় মুন্নাসহ কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ আক্রান্ত পুজামÐপ পরিদর্শন করেন।