কমলগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যার অন্যতম আসামি গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২১
ছবি ধলাইর ডাক

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাটে ব্যবসায়ী নেতা নাজমুল হাসান হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান আসামি তফাজ্জুল আলী (৩৫)সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ভোর রাতে ঢাকার কমলাপুরের একটি হোটেল থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এজাহারভুক্ত তিনজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া তাঁর কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এই গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) এ বি এম মুজাহিদুল ইসলাম পিপিএম, মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক, কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান, ওসি-ডিবি মো. বদিউজ্জামান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এই হত্যাকান্ডের মূল আসামিদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। তারই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ঢাকার কমলাপুর এলাকার একটি হোটেল থেকে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তফাজ্জুল আলীকে তাঁর এক সহযোগী খালেদ মিয়া (৫৩)সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) এ বি এম মুজাহিদুল ইসলাম।

এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস দল অভিযানে অংশ নেয়। তফাজ্জুল আলীর কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, এমিরেটস এয়ারলাইনসের টিকিট, দুটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, দুটি মুঠোফোন, দেশি-বিদেশি পাঁচটি সিমকার্ড এবং ৩৩৮ দিরহাম উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গত ১ নভেম্বর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, মাইক্রোবাসসহ এজাহারভুক্ত আসামি জুয়েল মিয়া (৪৫) ও কাজী আমির হোসেন হিরা (৪০)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসানকে তাঁর বাড়ির সামনে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। ওইদিন (রোববার) সন্ধ্যায় সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এই ঘটনায় নাজমুল হাসানের বড় ভাই শামসুল হক ১৪ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এসময় চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনার সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, নাজমুল হাসান হেঁটে তাঁর বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে তাঁর সামনে থামে। গাড়ি থেকে নেমে একজন দূর্বৃত্ত তাঁকে ধাওয়া করে। তিনি উল্টোদিকে দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাস্তায় পড়ে যান। গাড়ি থেকে নেমে আসা অন্যসকল দূর্বৃত্ত তাঁকে ঘিরে পায়ের দিকে কোপাতে থাকে। চার-পাঁচজন কোপানোতে অংশ নিলেও হামলায় অন্তত ১০ জন অংশ নেন। হামলার সময় মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থল থেকে মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়। প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। এসময় আশেপাশে দুএকজনকে দেখা গেলেও কেউ তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তফাজ্জুল আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত বছর (২০২০) ২ জুন নাজমুল হাসান গ্রেপ্তার জুয়েল মিয়ার উপর হামলা করে তাঁকে পুঙ্গ করে দেন। এই ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই হামলার পর থেকেই নাজমুল হাসানের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রায় দুই-তিন মাস থেকে নাজমুলের ওপর নজরদারি ছিল। নজরদারির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নাজমুল হাসান চৈত্রঘাট বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া একা বাজারের বাইরে যেতেন না।

পুলিশ সুপার আরো জানান, আসামিরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ঘটনার প্রায় ১৫-২০ দিন আগে থেকে দলবদ্ধভাবে তাঁর ওপর নজরদারি করতে থাকে। হামলার কাজ দ্রæত শেষ করতে দৈনিক চুক্তিতে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়। ঘটনার দিন (৩১ অক্টোবর) চৈত্রঘাট কালী মন্দিরের সামনে গাড়িটি অপেক্ষারত ছিল। এ দিন বাজার কিছুটা জনশ‚ন্য এবং নাজমুল হাসান একা থাকার সুযোগে তফাজ্জুল আলীর নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এরপর তারা দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে আত্মগোপন করে।

তফাজ্জুল আলী জানিয়েছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই তাঁর বিমানের টিকেট কাটা ছিল।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শী ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার ও ধলাই নদের বালু নিয়ে আগে থেকেই দুটি গ্রæপের মধ্যে বিরোধ, রেশারেশি ছিল। বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে আরও ঘটনা ঘটেছে। মামলা হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চৈত্রঘাট বাজারে কয়েক মাস আগে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। যিনি মারা গেছেন, তার বিরুদ্ধেও মারামারির কয়েকটি মামলা আছে। পুলিশ এই হত্যাকান্ডের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।