কমলগঞ্জে সার্ব্বজনীন শ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা॥ ৩ ঘন্টা পর জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের হস্তক্ষেপে লাশ সমাহিত॥
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের পালজোয়ান মৌজার পালগাঁও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সার্ব্বজনীন শ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা, নির্মিত শ্মশানের গর্ত ভরাট ও শ্মশান এলাকার বেড়া ভাংচুরের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। ৩ ঘন্টা পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ সমাহিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
পালগাঁও গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিপদ দেবনাথ, চিত্তরঞ্জন দেবনাথ, শিক্ষক তপন কুমার দাস, সমাজকর্মী হরিপদ দাস, রঞ্জিত বিশ্বাস, দিলীপ শীল, বিনয় মালাকার, বলাই দেব কানুনঙ্গ, নিধু ভূষন দাস, নিত্যানন্দ দেবনাথসহ অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী জানান, পালগাঁও গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য চয়ন দেবনাথের কাকা গোপাল চন্দ্র দেবনাথ (৭০) গত বুধবার সন্ধ্যায় মারা যান। পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী বুধবার রাত ৮টায় তার লাশ সৎকারের জন্য পালগাঁও সার্ব্বজনীন শ্মশানঘাটে নিয়ে লাশ সমাহিত করার জন্য শ্মশানে একটি গর্ত করে। এ সময় পালগাঁও গ্রামের কদ্দুছ মিয়া (৬০). ফজর আলী (৫৩), আং মজিদ (২৮). জামাল মিয়া (৩৬), কনাই মিয়া (৫৫), আনু মিয়া (৩৫), ইছাক মিয়া (৫৫) ও আলাউদ্দিন (৩৫) এর নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই শ্মশানে লাশ সৎকারে বাধা দেয়। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে শ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা, সমাধির জন্য নির্মিত শ্মশানের গর্ত ভরাট ও শ্মশান এলাকার বেড়া ভাংচুর করে। এ সময় মৃতের লোকজন ও এলাকাবাসী মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিব তরফদার, প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ সৎকার করা হয়।
পালগাঁও গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিপদ দেবনাথ ও শিক্ষক তপন কুমার দাশ জানান, পালজোয়ান মৌজার পালগাঁও গ্রামের জে,এল,নং ৩৫, এস, এ দাগ নং ২০৮ এর ৮৪ শতক ভূমি হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানভূমি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। পালজোয়ান মৌজার পালগাঁও গ্রামের এক নম্বর খাস খতিয়ানভূক্ত ৮৪ শতক ভূমিতে প্রাচীন শ্মশানঘাট বিদ্যমান। প্রায় দুইশ’ বছর ধরে পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত শ্মশানঘাটটি বর্তমানে স্থানীয় একটি মহল দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সম্প্রতি সময়ে শ্মশানঘাটের পুরো জমি বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হলেও প্রতিপক্ষের লোকেরা কিছু অংশ তাদের নিজেদের দখলে নেয়ার নানা পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ শ্মশানটি অত্র এলাকার শতাধিক হিন্দু পরিবারের শেষকৃত্য, সমাধি করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শ্মশানঘাটটি ব্যবহার করে আসছেন। এক পর্যায়ে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে ১৯৮৬ সনে মৌলভীবাজার মুন্সেফী ২য় আদালতে মামলায় ৮৪ শতক ভূমি শ্মশানঘাটের জন্য আদালত রায় প্রদান করেন।
পালগাঁও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আরো জানান, সম্প্রতি গ্রামের কদ্দুস মিয়া, ইছাক মিয়া, মজিদ মিয়া, বশির মিয়া, জামাল মিয়া, আনু মিয়া গং ব্যক্তিরা শ্মশানঘাটের কিছু জমি কবরস্থানের জন্য দিতে হবে বলে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যতায় দাঙ্গাহাঙ্গারও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। ফলে এ বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোন সুরাহা হয়নি। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের রেকর্ডকৃত শ্মশানের ভূমি থেকে কবরস্থানের জন্য জমি দিতে রাজি হননি। তারা বলেন, কাগজপত্রে ৮৪ শতক ভূমি থাকলেও বাস্তবে খিরনী নদীর ভাঙ্গনে বেশ কিছু ভূমি নদীর পেটে বিলীন হয়ে গেছে।
লাশ সৎকারে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পালগাঁও গ্রামের জামাল মিয়া ও আনু মিয়া বলেন, ঘটনার সময়ে আমরা এখানে ছিলাম না। পরে আসছি। তবে আমরা যতদুর জানি মূলত: এই ভূমি জমিদারী। তাছাড়া এস.এ খতিয়ানে মালিকানা একজনের আবার আলাউদ্দীন, মস্তফা উদ্দীনের বিনিময়কৃত ভূমি। এখানে দীর্ঘদিন ধরে গোচারন ভূমি ছিল। সম্প্রতি সময়ে কিছু স্থানে হিন্দু লোকজন সমাধি বা শেষকৃত্য করে আসছেন। কাগজপত্র বা রেকর্ডে এই ভূমি লায়েক পতিত। তাই আমরা এই ভূমিতে কবরস্থানের জন্য ব্যবহারের চেষ্টা করছি। তবে সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধা হওয়া প্রয়োজন বলে তারা দাবি করেন।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, লাশ সৎকারে বাধা দেওয়ার ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে লাশের সৎকার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।