করোনা আতঙ্কে প্রায় রোগীশূণ্য কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২০
ছবি ধলাইর ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে হাট বাজার জনশূণ্য হওয়ার মত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীশূণ্য হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার সকালে আউটডোরে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী এসে সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। সেখানে ভর্তি ছিল মাত্র মাইসা আক্তার (৭মাস) নামের ১ শিশু রোগী।  সে উপজেলা আলীনগর ইউপির চিৎলীয়া গ্রামের লালাই মিয়ার মেয়ে। শিশু রোগীকে আবার মঙ্গলবার বিকেলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সন্ধ্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগী শূণ্য হয়ে পড়ে। তবে বুধবার সকালে আবার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলিয়া গ্রাম থেকে আসা শিশুরোগী মাইসা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। তার মা বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে আত্মীয়স্বজন কেউই তাকে দেখতে হাসপাতালে আসেননি। রোগী শূণ্য হাসপাতালে শিশুটিকে নিয়ে অবস্থান করতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই শিশুটি সুস্থ্য হওয়ার আগেই বুকে আগলে হাসপাতাল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তাই তাকে মৌলভীবাজার সদও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে তিনি তাকে নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সম্ভবত করোনাভাইরাস আতঙ্কে প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই এখানে কমছিল রোগীর সংখ্যা। করোনাভাইরাসে মৃত্যুর খবর শোনার পর জনমনে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। সেক্ষেত্রে জরুরি হলেও অনেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করতে চাচ্ছেন না। কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত রোববার ২০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন, সোমবার মাত্র ৬জন রোগী ভর্তি হন। দিনে আউটডোরে কিছু রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও অনেকে ভয়ে ভর্তি হতে চাননি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশু রোগী মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তিরত হওয়ার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগী শূণ্য হয়। বুধবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় অল্প সংখ্যক রোগী এসে আউটডোওে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এর মধ্যে মাত্র ৬ জন রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য সরকারিভাবে ২৫ দিনেও পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ না করায় নিজের সুরক্ষার জন্য বাজার থেকে রেইনকোট কিনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন কর্মরত ডাক্তাররা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ রেইনকোট পরিহিত অবস্থায় চিকিৎসা দিচ্ছেন আগত রোগীদের। অপরদিকে নার্সরা মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাবস পরে সুরক্ষা ড্রেস ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, সরকারি নির্দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য পুরাতন ভবনের মহিলা কেভিনে আইসোলেশন কক্ষ তৈরী করে ২০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা প্রদানের জন্য এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত করার কোনো কিট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি। ফলে করোনা শনাক্তের কোনো উপায় নেই কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। একই সাথে এখনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের কোনো পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়নি। হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি রোগী এলে ডাক্তার ও নার্সরা আতঙ্কের মধ্যে চিকিৎসা প্রদান করছেন। এমন অবস্থায় সরকারের সুরক্ষা ড্রেসের জন্য অপেক্ষা না করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ৮জন ডাক্তার নিজ খরচে স্থানীয়ভাবে রেইনকোর্ট কিনেছেন।

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারিভাবে সুরক্ষা ড্রেস আসেনি। তবে বুধবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪০টি পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এসেছে। ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া আরও বলেন মঙ্গলবার রোগী শূণ্য থাকলেও বুধবার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬জন রোগী ভর্তি হয়েছে।