কোপাতে বললেন রিপ্রেজেনটেটিভদের! শেরেবাংলা মেডিকেলের পরিচালক

প্রকাশিত: ১০:৪২ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে (রিপ্রেজেনটেটিভ) লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম বাকীর হোসেনের কাছে বিচার দিয়েছেন ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) নেতারা। তবে পরিচালক ডা. এস এম বাকীর হোসেন হাসপাতাল কর্মচারীর পক্ষ নিয়ে উল্টো ফারিয়ার নেতাদের হুমকি দিয়েছেন। পরিচালক ডা. এস এম বাকীর হোসেন অভিযুক্ত কর্মচারী মামুনকে নির্দেশ দেন এরপর থেকে শুধু লাঞ্ছিত নয়, ছোরা দিয়ে কুপিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে হবে।

প্রতক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফালাহ আলদ্বীনকে হাসপাতালের প্রধান ফটকে নামিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মেজবাউদ্দিন। এ সময় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মামুন মো. মেজবাউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে মো. মেজবাউদ্দিনের শার্টের কলার ধরে টানাটানি করেন এবং গালিগালাজ করেন মামুন। আশপাশে উপস্থিত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

রিপ্রেজেনটেটিভদের সংগঠন ফারিয়ার একাধিক সদস্য জানান, রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে হাসপাতালের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সৌজন্য ইফতার করানোর জন্য ফারিয়ার নেতাদের কাছে আবদার করেছিলেন পরিচালক। ফারিয়া এ আবদার প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই পরিচালক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কর্মচারীদের দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিক্রয় প্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা হাসপাতাল পরিচালকের কাছে তার অফিস কক্ষে অভিযোগ করতে যান। অভিযোগ শুনে উল্টো কর্মচারী মামুনকে কিছু না বলে তাদের ওপর চড়াও হন পরিচালক। এ সময় অভিযুক্ত মামুনের উপস্থিতিতে পরিচালক বলেন, লাঠি নয় এরপর ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। যাকে সামনে পাবে তাকেই কোপাবে। পরিচালক কর্মচারী মামুনকে উদ্দেশ করে বলেন, কি পারবি না কোপাইতে? মামুন পারমু স্যার বলে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিলে এরপর থেকে কাউকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পেলে কুপিয়ে মাটিতে শোয়াইয়া (শুইয়ে) দিতে নির্দেশ দেন তিনি। এতে রিপ্রেজেনটেটিভরা হতভম্ব হয়ে পরিচালকের কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।

ফারিয়া বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি রেনেটার জোনাল ম্যানেজার শহীদ হোসেন মুন্না জানান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সদস্যরা জরুরি বৈঠক করেছেন। আজ কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার ফের ফারিয়ার সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভা থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম মো. বাকীর হোসেন বলেন, রোগী ও চিকিৎসকদের হয়রানি ঠেকাতে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রিপ্রেজেনটেটিভদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও তারা চিকিৎসকদের বিরক্ত করেন। সকাল ৯টার দিকে সিসি ক্যামেরায় তিনি দেখতে পান, প্রধান গেটের সামনে কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ঘোরাফেরা করছেন। কর্মচারী মামুন তার নির্দেশেই তাদের ডেকে আনতে যায়। তবে তারা মামুনকে গালমন্দ করেন। এতে কর্মচারী মামুন ক্ষুব্ধ হয়ে একজনের শার্টের কলার ধরে। এ ঘটনার পর তারা বিচার দিতে এলে কর্মচারী মামুনকে গালমন্দ করার কারণ জানতে চাওয়া হয়। তবে তারা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এসময় তাদের সতর্ক করতে কথা না শুনলে দা-ছুরি নিয়ে নামতে বলা হয় কর্মচারীদের। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রিপ্রেজেনটেটিভদের প্রবেশ ঠেকাতে এমনটা বলা হয়েছে। এর মানে তাদের দা-ছুরি দিয়ে আঘাত করতে বলা হয়নি। এটা কথার কথা বলে দাবি করেন পরিচালক এস এম মো. বাকীর হোসেন।