কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: চা বাগানে কাঁচা চা পাতা চুরি করে নেয়ার সংবাদ বাগানের হেড ক্লাকর্কে জানানোর পর চা পাতা চোর চক্র তথ্য প্রদানকারী শ্রমিকদের উপর দু’দফা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা শ্রমিকের বাড়ির বেড়া ভাঙচুর করে গরু, ছাগল, দোকানের ক্যাশ ও একটি দানবাক্স লুট করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আহত ৩ জন শ্রমিককের মধ্যে ২জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাগানে সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোর সামনে ফুলের টব ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় উল্টো নির্যাতিত চা শ্রমিকদের আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৮ মে) দিবাগত রাত ১০ টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সুনছড়া চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাগানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন আলীনগর চা বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া চা বাগানের ১০ নম্বর সেকশনে প্রবেশ করে বস্তির একটি সশস্ত্র চক্র কাঁচা চা পাতা চুরি করে নিচ্ছে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাগানের শ্রমিক স্বপন নায়েক ও হরিনারায়ন হাজরা বাগানের টিলাক্লার্ক গোপাল চক্রবর্তীকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে গোপাল চক্রবর্তী চাপাতা চোরদের কাছে তথ্য প্রদানকারী শ্রমিকদের নাম প্রকাশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আলীনগর ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামের মঈনুল আহমেদ রাত ৯টায় চা বাগান বাজারে চা শ্রমিক স্বপন নায়েক ও হরিনারায়ন হাজরাকে মারধোর করে বেঁধে রাখে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে জানার জন্য টিলা ক্লার্কের বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোয় যান। সেখানে ব্যবস্থাপককে না পেয়ে বাংলোর সামনে রক্ষিত ফুলের টব ভাঙচুর করেন।
তবে অভিযোগ করে স্বপন নায়েক, কাজল হাজরা, হরিনারায়ন হাজরা বলেন, আমাদের বেঁধে ও মারধোরের সংবাদে শ্রমিকরা আমাদের নাম প্রকাশ করার বিষয়টি জানতে টিলা ক্লার্ককে না পেয়ে সহ-ব্যবস্থাপকের বাংলোয় যান। তাকে না পেয়ে এসময়ে মূলত কিছু ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে বস্তির হামলাকারীরাই বাংলোর সামনে ফুলের টব ভাঙচুর করে। তারা আরও বলেন, এরপরপরই মঈনুল সহযোগে চিতলীয়া গ্রামের রশীদ উল্লা, ইব্রাহিম মিয়া, সেলিম মিয়া, মন্নান আলী, হান্নান মিয়া, সাকেল সহ চা পাতা চোরদল আমাদের বাড়িতে এসে সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় চা শ্রমিক স্বপন নায়েক (২৮), হরিনারায়ন হাজরা (৩০) রক্তাক্ত জখম ও কানাইলাল হাজরা (২৫) আহত হন। হরিনারায়নের মা রাজকুমারী হাজরা বলেন, হামলাকারীরা ধারালো দা নিয়ে খুঁটির সাথে আটকে আমার গলায় দা ধরে ও ছেলের বউদেরও মারধোর করে। পরে বাড়ির বিপদনাশিনী মন্দির ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেয়। এসময় তারা ঘরের ৭টি গরু, ৫টি ছাগল, দোকানের ক্যাশ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি দানবাক্স লুটে নেয়। হামলাকারীরা রাতে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানো যায়নি। পরে প্রথমে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ ও পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানানো হলে থানা পুলিশ আসার পর রাতে তাদের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
চা বাগানে সহ-ব্যবস্থাপকের বাংলোর সামনে ফুলের টব ও জানালার গøাস ভাঙচুরের ঘটনায় সহ-ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বাদি হয়ে উল্টো আহত হরিনারায়নসহ ৭জনকে আসামী করে শনিবার কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। চা বাগানের টিলা ক্লার্ক গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, চাপের মুখে পড়ে তথ্য প্রদানকারীর নাম বলতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমদ চৌধুরী জানান, সংবাদ পেয়ে আমাদের স্টাফরা সেকশনে গিয়ে চা পাতা চুরি করতে কাউকে পায়নি। শ্রমিকরা আমাকে অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। তারা সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোয় ভাঙচুর করেছে। বিষয়টি জানতে পেরে বাগানের পাহারাদারদের হামলায় দু’তিন জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তবে টিলা ক্লার্ক চা পাতা চুরির তথ্যপ্রদানকারীদের নাম বলা ঠিক হয়নি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী বলেন, চা শ্রমিকদের বাড়িঘরে দুদফা হামলা, গরু-ছাগল, ক্যাশ লুট ও সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোর সামনে ভাংচুর ঘটনাটি দু:খজনক। বিষয়টি চা বাগান পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রæত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, বাংলো ভাঙচুরের ঘটনায় চা বাগানের পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে। তবে আহতদের ঘটনা ভিন্ন। তারাও যদি অভিযোগ দেয় তাহলে মামলা নেয়া হবে।