অদম্য মেধাবী পিতৃহীনা দরিদ্র অদিতির চিকিৎসক হবার স্বপ্ন কি শুধু স্বপ্নই হয়ে থাকবে!

প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর চা বাগানের দরিদ্র পিতৃহীনা অদিতি নুনিয়া। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা মাধবপুর চা বাগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ লাভ করেছে। বাবা মারা যাবার পর মাধবপুর চা বাগানের একটি ছোট বিউটি পার্লারে কাজ করে মেয়ে অদিতি ও ছেলে অতুলের লেখা পড়ার খরচ চালান রুমা নুনিয়া। অনেক কষ্টে নিজের আগ্রহে ও চেষ্টায় লেখা পড়া করে অদিতি এবছর এসএসসি পরিক্ষায় এ সাফল্য লাভ করেছে। এখন উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে নিয়মিত পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র জনের সেবা করতে চায় সে।
অদিতি জানায়, বাবা অনন্ত নুনিয়া একজন ডিপ্লোমা ছিলেন। এক ছোট ভাই ও বাবা- মাকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে বাবা মারা যাবার পর থেকে তাদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। নিজের লেখা পড়া নিয়ে এক সময় সংশয় ছিল। তবে মা রুমা নুনিয়া নিজে কষ্ট করে মেয়ে ছেলের লেখা পড়া চালিয়েছেন। এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করার মত আর্থিক সামর্থ তার নেই। চিকিৎসার অভাবে বাবা মারা যাওয়ার তার খুবই ইচ্ছে ভবিষ্যতে সে একজন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্রজনের সেবা করতে।
মা রুমা নুনিয়া বলেন, চা বাগানের ভিতর বিউটি পার্লারে তেমন আয় নেই। বস্তি লাইনে টিন শেডের একটি ছোট ঘরে কোন রকমে মেয়ে ছেলেদের নিয়ে তিনি বসবাস করছেন। তার ইচ্ছে ছিল একটি ভাল পাত্র দেখে মেয়ে অদিতিকে বিয়ে দিবেন। আর মেয়ের ইচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবে। এ আশা তার পরিবারের জন্য আকাশ চুম্বী। নিজে এক বেলা আধবেলা খেয়ে মেয়ে ও ছেলের লেখা পড়া এই পর্যন্ত চালিয়েছেন। প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র সমাপনীতেও অদিতি জিপিএ-৫ লাভ করেছে। এখন বাকিটুকু তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তিনি নিজেও জানেন না মেয়ের ভবিষ্যত লেখাপড়া কিভাবে চালাবেন বলে কেঁদে ফেলেন রুমা নুনিয়া।
অনেক কষ্টে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছি। আর পারছি না। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা আমি কোথায় পাব ? পরিবারে এখন আনন্দের পরিবর্তে বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশা তার ও তার পরিবারের কাছে চরম বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
অদিতি নুনিয়া ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও সংসারের জন্য কিছুটা অবদান রাখতে চায়, চায় ডুবন্তপ্রায় সংসারের হাল ধরতে। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষায় এমন আশ্চর্য্যজনক ফলাফলের পরও তার পরিবার চরম দূর্ভাবনায়। অভাগিনী মায়ের সাধ আছে,সাধ্য নেই। এ অবস্থায় কতোদুরই যেতে পারবে অদিতি। মেধার আলোয় আলোকিত হবে হয়তো অল্পশিক্ষিত কোন বরের রান্নাঘর। অথবা কোন এন,জিও এর প্রি-প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্বরবর্ণ,নামতা শিখাতে বা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে কিস্তির হিসাব দিতেই ব্যস্ত থাকবে। ভূলে যাবে চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র রোগীদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার সেই ব্রতের কথা।
নুন আনতে পানতা ফুরানো সংসারের ভাত-কাপড়ের চাহিদা মিটাতে হিমশিম অবস্থা যাদের,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়ানো তাদের জন্য ভাঙা ঘরে ছেড়া কাঁথায় আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন বৈকি। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য দারিদ্রের সুকঠিন বাধা ডিঙিয়ে এতটুকো পথ যারা পাড়ি দিতে পেরেছে,শাণিত মেধার মঙ্গল আলোয় স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয়ে তারা এগিয়ে যাবে যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসে, তবেই পুরণ হতে পারে অদিতির উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নসাধ। নতুবা এখানেই থেমে যাবে অদম্য মেধাবী অদিতির শিক্ষা জীবন। আর নিজেকে চিকিৎসক করে দরিদ্র রোগীদের সেবা করার সে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই হয়ে থাকবে ।
মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান বলেন অদিতি খুবই মেধাবী। তাকে একটু সহায়তা দিলে সে ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।