ইফতার

প্রকাশিত: ২:৩১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৭, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: হজরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের প্রতি রাত্রে আল্লাহ অসংখ্য অগণিত দোযখী বান্দাকে জান্নাত দান করেন’।

রাসূলুল্লাহ এই একটি ঘোষণাই রমজানের মাহাত্য ও বড়ত্ব প্রকাশের জন্য যথেষ্ট। তবুও রাসূল (সা.) আরো অগণিত হাদীসে রমজানের বিষয়ে ফজিলতের কথা জানিয়েছেন। সেহরি; তাতেও রয়েছে রহমত বরকতের অসীম সমীরণ। ইফতার; তাতেও।

ইফতার রোজার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। ইফতার দ্বারাই মূলত রোজাগুলো পূর্ণতা পায়। এই ইফতারের যত ফজিলত রয়েছে কয়েকটি তুলে ধরছি। ফজিলত বর্ণনার আগে ইফতারের দোয়াটা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। ইফতারের প্রসিদ্ধ দোয়া-

اللهم لك صمت وبك أمنت وعليك توكلت وعلي رزقك افطرتُ

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই রোজা রাখছি, আপনার প্রতিই ঈমান আনছি, আপনার ওপরও ভরসা করি এবং আপনার রিযিক দ্বারাই ইফতার করছি।

হাদীসের কিতাবে বর্ণিত আছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস এই দোয়াটি এভাবে পড়তেন-

اللهم إني اسئلك برحمتك التي وسعت كل شي أن تغفرلي

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নিজের অপরাধের মার্জনা কামনা করছি ওই রহমতের ওসিলায় যা প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রেখেছে।

হাদীস শরিফে ইফতারকে সামনে বিভিন্ন প্রকার দোয়ার কথা উল্লেখ আছে। তন্মধ্যে সবচে প্রসিদ্ধ ও পঠিত দোয়াটি হলো এই-

يا واسع الفضل اغفرلي 

অর্থ : হে অনুগ্রহের প্রাচুর্য, আমাকে ক্ষমা করে দিন

দ্রুত ইফতার করা:
হজরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.)  থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ তত দিন কল্যাণের ওপর থাকবে, যত দিন তারা অবিলম্বে ইফতার করবে। (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭, সহিহ মুসলিম, হাদীস : ১০৯৮, সুনানে ইবনে মাযা : ১৬৯৮, সুনানে তিরমিজি : ৬৯৯, সহিহ ইবনে খুজাইমা : ২০৫৮, মুসনাদে আহমাদ : ২২৮০৪)

হজরত আবু আতিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও মাসরুক হজরত আয়েশা (রাযি.) এর নিকট গিয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনিন! হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথিদের মধ্যে দুজন এমন আছেন যাদের একজন অবিলম্বে ইফতার করেন এবং অবিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। আর অপরজন বিলম্ব করে ইফতার করেন এবং বিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, দুজনের মধ্যে কে অবিলম্বে ইফতার করেন এবং অবিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন? রাবী বলেন, আমরা বললাম, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.)। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৯৯, সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৪, সুনানে নাসাঈ : ২১৬১, মুসনাদে আহমাদ : ২৪২১২)

ইফতার নিয়ে অপেক্ষা করা:
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করাও সুন্নত। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের প্রতি মুমিন বান্দার নিখাঁদ আনুগত্যের এক পরম অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়, যা মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। কারণ, ওই সময়ে রোজাদার থাকে সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত। মারাত্মক ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে থাকার পরও না খেয়ে সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকার মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের সামনে নিজের চরম অসহায়ত্বকে প্রকাশ করে এবং খোদানুগত্যের এক বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তাই ইফতারের আগ মুহূর্তে ইফতারি সামনে নিয়ে রোজাদার দোয়া করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার সে দোয়া কবুল করেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল না করে ফিরিয়ে দেয়া হয় না, (ক) ন্যায়বিচারক শাসনকর্তার দোয়া; (খ) ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া এবং (গ) মাযলুমের (নির্যাতিত ব্যক্তির) দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৯৭৪২)

খেজুর দিয়ে ইফতার করা:
হজরত সালমান ইবনে আমের (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে, তার উচিত খেজুর দিয়ে ইফতার করা। তবে সে যদি খেজুর না পায়, তাহলে সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ পানি পাক-পবিত্র। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৮৪৭, মুসনাদে আহমাদ : ১৬২২৫, সহিহ ইবনে খুজাইমা : ২৭৮, বায়হাকি শুআবুল ইমান : ৩৬১৫)