ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত কমলগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলো

প্রকাশিত: ৫:৪১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০১৯
ছবি- ধলাইর ডাক

ষ্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ পর্যটন স্পটগুলো।

বুধবার সকালে মাধবপুর লেক আর লাউয়াছড়া উদ্যানে দেখা মিলে দুর-দুরান্ত থেকে আগত পর্যটনপ্রেমী ভ্রমন পিপাসুদের। এদের মধ্যে স্বপরিবারে ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ঈদের দিনের চেয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও পর্যটকরা ছুটে এসেছেন জীববৈচিত্র্যের অপরূপ সমাহার দেখতে।

ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা আখাউড়ায় চাকুরীজীবি কামাল পারভেজ, নরসিংদীর  জামাল আহমেদ, হবিগঞ্জের এনজিও চাকুরী জীবি রফিকুল আলম, কলেজ ছাত্র আহাদ মিয়া, সিলেটের পালভিন সুলতানা, নাফিজা কামাল জানান, লাউয়াছড়ার বন একটি সমৃদ্ধ বন। প্রকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্য আর জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনটি যে কেউ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। লাউয়াছড়ায় ঘুরতে আসা শিশু তমাল ইসলামের সাথে কথা বললে সে মায়াবী কন্ঠে জানায়, এখানে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। আব্বু আম্মুর সাথে ঘুরতে এসেছি। বানরের লাফালাফি দেখেছি। বড় একটা ব্যাঙের ছাতা দেখেছি (ব্যাঙের ছাতার আদলে তৈরি মানবছাতা)। এখানে এত গাছ, একসাথে এত গাছ এর আগে দেখিনি।

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। পাহাড়ি টিলার উপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। মাধবপুর চা বাগানে অবস্থিত মাধবপুর লেইকে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। লেকের চারপাশে বিশাল টিলায় সারিবদ্ধ ছোট-বড় গাছ আর সবুজ চা গালিচার টিলার মাঝখানে জলরাশি। টলটলে রূপালী জলের সঙ্গে দিবা-নিশির মিতালি করছে নীল পদ্মফুল। জলের আলো ছায়ার নীল পদ্মের লুকোচুরি খেলা মনমুগ্ধ করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে নিজের রূপ দিয়েই আকর্ষণীয় হয়ে উঠায় জলের পদ্ম কন্যার মায়ায় আকড়ে ধরে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। তার এই মনোরম সৌন্দর্য্য দর্শনে ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে এসেছেন মাধবপুর লেকে।

নয়নভিরাম এ জলারণ্য দল বেঁধে দেখতে গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমন বেশি ছিলো বলে জানান, লেকের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা বাবুল সরকার। মাধবপুর লেকে বেড়াতে আসা কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী ফারজানা ইসলাম, সিলেটের স্কুল শিক্ষক জাহেদুল হাসান, হবিগঞ্জের ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান, আশুগঞ্জের চাকুরীজীবি আব্দুল মতিন, চুনারুঘাটের গৃহিনী আফিয়া খাতুন জানান, মাধবপুর লেক দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। এত সুন্দর যে এখানে বার বার আসতে মন চায়।

পাহাড়ি উঁচুনিচু টিলা ও সবুজ চা বাগান মধ্যে অবস্থিত লেকটি আমাদের আলাদা এক মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে। আগামী ঈদে আবার এই লেক দেখতে আসব। সবার ছুটোছুটিতে পর্যটন স্পটগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটনের জেলা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আনন্দ ও উৎসবে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদ উল আজহা।

এছাড়া ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শমসেরনগর বাগীছড়া লেক, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধসহ কমলগঞ্জের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। তবে ঝর্নাধারা হামহাম জলপ্রভাতে পর্যটকদের ভীড় কিছুটা কম ছিলো। ভীড় কম থাকার কারণ হিসেবে জানা যায়, হামহাম জলপ্রপাতে ভ্রমণ করতে পুরো একদিনের প্রয়োজন। আর অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়। কিন্তু ঈদে বিভিন্ন ইভেন্টে ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকরা আসছেন হামহাম জলপ্রভাত দেখতে। তাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশী।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন জানান, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও আগত অত্যধিক পর্যটকের কারনে কিছুটা বিঘ্ন হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করার জন্য পায়ে হাঁটার তিনটি ট্রেইল পথ রয়েছে। দর্শনার্থীরা এই ট্রেইল ঘুরেই চলে যান। এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে। পর্যটকদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ, পর্যটন পুলিশ ও সিএমসি সদস্যদের নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও প্রকৃতি ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।