উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এখনো; কাঁদে পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষ

প্রকাশিত: ৪:৪০ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৫

ধলাই ডেস্ক: স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের যোগীবিল গ্রামের কনুবাবুর বাড়ি রাস্তা হতে লাংলিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র পর্যন্ত, রাস্তার মধ্যেবর্তী থেকে শুরু ডাক্তার নিবাস দেবনাথ এর বাড়ি হতে শমশের নগর ভায়া সুনছড়া আদমপুর এর প্রধান সড়ক পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা রাস্তা যেন উন্নয়নের আলো থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন।

আজও সড়কটি যেন পড়ে আছে ব্রিটিশ আমলের মতোই। যোগীবিল, চেরারপার, লাংলিয়া, শিবপুর নাথপাড়া ও আলীনগর চা-বাগান এলাকার মানুষের প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম এই রাস্তাটি। প্রতিদিন হাজারো মানুষ নানা প্রয়োজনে—স্কুল, কলেজ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাট-বাজার, ব্যাংক কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করে এই দুর্ভোগ পেরিয়ে।

বর্ষায় রাস্তায় হাঁটু পানি, সাইকেলের চাকা কাদায় আটকে পড়ে, পায়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর।বৃষ্টির দিনে রিকশা, সিএনজি, অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কাঁদামাটি আর পিচ্ছিল রাস্তায় মানুষ পড়ে যায়, জখম হয়, বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের। চরম দুর্ভোগ নিয়েই প্রতিদিন চলতে হয় মানুষকে।

স্কুলছাত্রী সাদিয়া আক্তার জানায়, “জুতা হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়। রাস্তায় এত কাদা থাকে যে পা গর্তে পড়লে উটা মুশকিল হয়। পড়ে গিয়ে কাপড় ভিজে যায়। তবুও যেতে হয় স্কুলে। কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরি।”

কলেজছাত্র অসীম দেবনাথ বলেন, “যানবাহন চলে না, হেঁটে যেতে হয় অনেক দূর। পরীক্ষা থাকলেও রাস্তায় পড়ে সময়মতো পৌঁছাতে পারি না। আমরা কবে উন্নয়ন দেখতে পাবো?”

চা-শ্রমিক আরতী কৈরী বলেন, “ ইউনিয়ন পরিষদে কাজে যাই, ফিরে আসি বাচ্চা নিয়ে। বর্ষায় রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে একবার পড়েই পা মচকে গেল। কিন্তু আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।”

শিক্ষার্থী অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “প্রতিদিন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি—পড়বে কিনা, ভিজে যাবে কিনা, সাপ-জোকের ভয় তো আছেই।”

সবজি বিক্রেতা অতুল দেবনাথ বলেন, “ছলিমবাজারে সবজি বিক্রি করি। সাইকেল চালিয়ে যেতে যেতেই একবার পড়ে গেছি রাস্তায়। চাকা চলে না, মানুষ হাসে। আমরা কি মানুষ না?”

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সুকুমার রায় বলেন, “বছরের পর বছর ধরে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি করে আসছি। একাধিকবার ফাইল পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোন বরাদ্দ আসেনি।”

বর্তমান ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন হতাশ কণ্ঠে বলেন, “আমি নিজের উদ্যোগে অনেকবার আবেদন করেছি। অথচ প্রশাসনের কেউ এটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। মানুষের এই ভোগান্তি যেন নিয়তি হয়ে গেছে।”

এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা যায় ছলিমবাজার মবশ্বীর আলী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, তৌহিদুল ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়, কমলগঞ্জ মডেল প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা ও ব্যাংকসমূহে। অথচ দীর্ঘদিনেও এখানে একটি ইটের সলিং বা কার্পেটিং পর্যন্ত হয়নি।

প্রশাসনের নজর কোথায়?

স্থানীয় আব্দুল মালিক,পেমানন্দ দেবনাথ,করিম মিয়া,সাবিয়া বেগম,সুনিল নাথ কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন—কবে আসবে উন্নয়ন? কেন বারবার আবেদন করেও সাড়া মেলে না? জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কি আমাদের জন্য না?

এই সড়কটি শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি যেন পাঁচটি গ্রামের প্রাণ। এই প্রাণ ভেঙে যাচ্ছে প্রতিদিন। একটি পাকা রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে হাজারো মানুষের জীবনে যদি স্বস্তি ফেরানো যায়, তবে সেই দিকেই এখনই প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত — এমনটাই দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা।