এমসি কলেজে গণধর্ষণ : ৮ ছাত্রলীগ কর্মীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট

প্রকাশিত: ২:২৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২০

ধলাই ডেস্ক: সিলেটের ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি) ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের দুই মাস ৮ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে ওই ঘটনায় গ্রেফতার আট ছাত্রলীগ কর্মীকে অভিযুক্ত করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বহুল আলোচিত এই গণধর্ষণ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরের শাহপরাণ (রহ.) থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

এ তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, চার্জশিট দাখিলের প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়ে দুপুর ১২টায় নগরের শাহজালাল উপশহরের এসএমপির উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।

তিনি বলেন, মামলার আসামিদের ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দাখিলে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার তিনদিনের মাথায় পুলিশ আদালতে চার্জশিট প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে।

গত রোববার হাতে পাওয়া ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণেরস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের সঙ্গে মামলার আসামিদের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে একটি রাস্তায় প্রাইভেট কারের মধ্যেই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযুক্ত এসব কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে ওইদিন রাতেই মহানগর পুলিশের শাহপরাণ (রহ.) থানায় নির্যাতিতা নারীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব ও রেঞ্জ পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহার নামীয় ৬ জনসহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতার আটজনকেই ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে তারা সকলেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। বর্তমানে তারা জেলহাজতে আটক রয়েছেন। এর সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টের নিদের্শে গঠিত তদন্ত কমিটি সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হলরুমে গত ৪ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ ঘটনায় গণশুনানি করে। পরে কমিটির সদস্যরা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের গণধর্ষণের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে গত ১৬ অক্টোবর ১৭৬ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়েছে। যার শুনানি হয় ২০ অক্টোবর। এদিন শুনানি শেষে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এদিকে গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দোহাই দিয়ে কলেজ কমিটির এ প্রতিবেদনটি সিলগালা করে রাখেন।

এছাড়া গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সনদ বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন, সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।

এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।

সূত্র: জাগো নিউজ…