স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় চাচা কর্র্তৃক ভাতিজার নিকট জমি বিক্রির দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারো দখলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে এখন টাকা ও জমি হারিয়ে ভোক্তভোগী পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রবিবার (১৪জুলাই) দুপুরে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আধকানী গ্রামে দখল নেওয়ার এ ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগকারী রাজু আহমেদ পারভিন ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আবুল কালাম ওরপে কালাম বাবু তার চাচাতো ভাই আধকানী গ্রামের রাজু আহমেদ পারভিনের নিকট ২০০৯ সালে তৎকালীন বাজার মূল্যে ৪ লক্ষ টাকা দরে ১৫ শতক ভূমি ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। রাজু আহমেদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। দলিল করার পর বাকী ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার শর্তে কালাম বাবু তার চাচাতো ভাই রাজু আহমেদকে জমি বুঝিয়ে দেয়। রাজু আহমেদ ঐ ভুমিতে দীর্ঘদিন ধরে ফসল ফলিয়ে ভোগ দখল করতে থাকে। এদিকে জমির দলিল করে দেয়ার জন্য কালাম বাবুকে তাগাদা দিলে ভুমির কাগজে দাগে ভুলের কথা বলে দলিল সম্পাদন হচ্ছেনা, দাগ সংশোধন করার পর দলিল সম্পাদন করবে বলে জানান।
রাজু আহমেদ আরো বলেন, সম্প্রতি আধকানী এলাকায় ভুমি ক্রয়-বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার দখলীয় ভুমির কোন দলিল নাই জানতে পেরে কালাম বাবুর ছেলে আদমপুর বাজারের ব্যবসায়ী কাইয়ুম ও কালাম বাবুর ভাগিনা মোক্তার হোসেন উকিলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা নিজে এবং স্থানীদের মাধ্যমে আমাকে প্রস্তাব দেয় জায়গার দাগে যখন ভুল আছে দলিল করা যাবে না এবং দীর্ঘদিন জমি ভোগ দখল করেছ এখন তোমার দেয়া টাকা ফেরৎ নিয়ে যাও, আমরা জমি বিক্রি করবো না। এই প্রস্তাবে আমি রাজী না হওয়ায় তারা আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেয় এবং গত মঙ্গলবার রাতে কালম বাবু আমাকে কালাম বাবুর ছেলে কাইয়ুমের দোকানে ডেকে নিয়ে ও তার সঙ্গীরা জায়গা ছাড়ার কথা বলে। এতে রাজি না হলে আমাকে মারধর করে। এনিয়ে আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট বিচার প্রার্থী হলে সালীশে দেখে দেয়ার আশ^াস দেন।
এদিকে ১৪ জুন দুপুরে কাইয়ুম ও তার সঙ্গীয় টাইগার কবির, উকিল আহমেদ, কয়েছ আহমেদ, তুয়াবুর আহমেদ, জহুর আলী সহ ভাড়াটিয়া ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী এনে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার দখলীয় ভুমি তারা টিনের ভেড়া দিয়ে দখল করে নেয়। আমরা ভয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশংকায় তাদের বাঁধা না দিয়ে ৯৯৯ ফোন দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয় চাই। আমাদের ফোন পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়।
রাজু আহমেদ আরো বলেন, টাকা দিয়ে জমি কিনে এখন টাকা ও জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার পথে। আমি প্রশাসনের কাছে সু-বিচার প্রার্থনা সহ জানমালের নিরাপত্তার দাবী করছি।
এলাকার প্রবীণ মুরব্বির হায়দর বলেন, এই জমি বিক্রির স্বাক্ষী আমি। আমার হাতেই কালাম বাবুকে ১লাখ ৮৫ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেই। তার পর থেকে এই জায়গা রাজু ভোগ দখল করে আসছে।
এছাড়াও এলাকার প্রবীণ মুরব্বী জহুরা খাতুন বলেন, ‘কালাম বাবু জায়গা বিক্রির জন্য আমাকে ধরে যে, পারভিনকে বলতে কিছু টাকা দিয়ে জায়গাটা নিয়ে নেয়ার জন্য। আমার কথার পর পারভিন টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন। ১৫ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছে। এখন বলছে এই জায়গা তার বোনকে ফরাইজ হিসাবে কাগজ করে দিয়েছে।’
অভিযুক্ত কালাম বাবুর ছেলে এএসএম কাইয়ুম তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই জমি আমার ফুফুর ফরাইজের জায়গা। আমার ফুফাত ভাই জায়গা দখলে নিছে। অন্যের জমি আমার বাবা কি ভাবে বিক্রি করবেন। রাজুকে মারধর ব্যাপারে বলেন, আমার ফুফাতো ভাইকে তার জমিতে বাউন্ডারি দিতে বাঁধা দিলে তাদের উভয়ের মধ্যে গালিগালাজ ও তর্কাতর্কি করা ঘটনা ঘটেছিল। যেহেতু উভয়ে আমাদের আতœীয় তাই আমার প্রতিষ্টানে এনে এদেরকে সালীশে ঘটনা দেখে দেয়া হবে বুঝিয়ে উভয় পক্ষকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেই। রাজুকে মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি।
সন্ত্রাসী নিয়ে জমি দখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী নয় শ্রমিক নিয়ে গিয়ে ফুফাতো ভাইয়ের বাড়ীর বেড়া নির্মান করেছি।’
তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার এসআই অনিক দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যাই। বিষয়টি শালীসের মাধ্যমে সমাধান করার জন্য উভয় পক্ষকে শান্তনা দিয়ে আসি।’
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, ‘আধকানীতে জমি নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। রাজু আমার কাছে এসে বিচার প্রার্থী হলে ও অন্য পক্ষ এখনো আসেনি। আসলে বিষয়টি শালীশে দেখে দেয়া হবে।’