কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ব্যাটারিচালিত টমটম অটোরিকশাকে সাইড দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় এক নারী, পল্লী চিকিৎসকসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন পল্লী চিকিৎসকের মা মিনু বেগম। হামলাকারীরা ক্ষুর দিয়ে তার একটি স্তন ক্ষতবিক্ষত করেছে। গুরুতর আহত ৬ জনকে কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে সিলেট এম, এ, জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৪ হামলাকারীকে আটক করেছে। গত সোমবার (১৮ মে) রাত ৯ টার দিকে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজটিলা গ্রামে নৃশংস এ হামলার ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ১৭ জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
থানায় দায়েরকৃত মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকেলে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মীর হোসেন। বিকেল ৫ টার দিকে কমলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা ব্যাটারিচালিত টমটম অটোরিকশাকে সাইড দেওয়া নিয়ে টমটম চালক মনু মিয়ার সাথে কথা কাটাকাটি হয় মীর হোসেনের। তাৎক্ষনিক এ বিষয়টি মীমাংসা করেন স্থানীয় পথচারীরা। এ ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৯ টার দিকে রাজটিলা গ্রামস্থ নিজ বাড়ির সামনে পল্লী চিকিৎসক মীর হোসেনের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় টমটম চালক মনু মিয়া, তার ভাই সানু মিয়া, শাহাবউদ্দিনের নেতৃত্বে তার আত্মীয়স্বজন। হামলাকারীরা দা ও ক্ষুর দিয়ে মীর হোসেনের মাথা, ঘাড় ও পিঠে একাধিক আঘাত করে। তার চিৎকারে তার মাসহ ভাই এবং স্বজনরা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা করা হয়। হামলায় পল্লী চিকিৎসক মীর হোসেন, তার মা মিনু বেগম ছাড়াও আহত হয়েছেন আমজাদ মিয়া, আক্কাস মিয়া, আজাদ মিয়া, ইয়াছিন মিয়া। এসময় মীর হোসেন ও তার পরিবারের লোকজনকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা বেশ কয়েকজন পথচারীও হামলাকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। এতে ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ে তৃতীয় পক্ষ। ক্ষুদ্ধ এলাকার লোকজন হামলাকারীদের উপর চড়াও হলে আহত হন আরও বেশ কয়েক জন। এই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় তিন পক্ষের মোট ১২ জন আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে আহতদের মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তন্মধ্যে গুরুতর আহত পল্লী চিকিৎসক মীর হোসেন সহ ৬ জনের অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে রাতেই সিলেট সিলেট এম,এ,জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
হামলার খবর পেয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৯ টায় কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাজটিলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাইজিদ নামে এক হামলাকারীকে আটক করেছে। পরে পৃথক অভিযানে আরো তিনজনসহ মোট ৪ জনকে এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করা হয়েছে এবং ঘটনায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছেন-রাজটিলা গ্রামের নুর মিয়া (৫৯), শাহাবউদ্দিন (২৩), মোজাহিদ মিয়া (২২) ও বাইজিদ মিয়া (২১)।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে আহত পল্লী চিকিৎসক মীর হোসেনের মামা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় এ প্রতিনিধিকে জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।