কমলগঞ্জে নিজের বাল্যবিবাহ রুখতে এবার ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী উমাবতি ভর প্রধান শিক্ষকের দারস্থ হলো।

প্রকাশিত: ৭:৫১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টারঃ ফাল্গুন-বৈশাখ এলেই চা বাগান শ্রমিকদের বিয়ের হিড়িক পড়ে। আর এ বিয়ের মধ্যে বেশীরভাগ হয় বাল্যবিবাহ । বাল্যবিয়ের ব্যধিতে আক্রান্ত হয় চা বাগান পল্লীগুলোর অল্প বয়সের স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীরা। সচেতনার অভাবে কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্যবিয়ের প্রবনতাটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর হাজী উস্তাওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর চা বাগানের দরিদ্র চা শ্রমিক শিক্ষার্থী শ্রাবনী কর তার বাল্যবিবাহ রুখতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাহায্যের আবেদন করার একদিনের মাথায়, এবার উপজেলার মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাধবপুর চা বাগানের দরিদ্র চা শ্রমিক সন্তান উমাবতি ভর (১৩) তার নিজের বাল্যবিবাহ রুখতে নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান এর আবদেন করে সহযোগীতা চাইলো। দরিদ্র চা শ্রমিক শিক্ষার্থী উমাবতি ভর ও প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান এর সাথে আলাপকালে জানা যায়, ৫ বছর পূর্বে তার (উমাবতি)’র পিতা চা বাগানের শ্রমিক মোহনলাল ভর মারা যান, স্বামীর শোক সহ্য না করতে পেরে কিছু দিনের মধ্যে উমাবতির মা অন্নদা ভরও মারা যান। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হাড়িয়ে অসহায় হয়ে পড়ে উমাবতি। আর সুযোগে দেখবালের দায়িত্ব নেন উমার ভগ্নিপতি জগদিশ ভর। স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাধবপুর চা বাগানের উত্তর লাইন শশুড়বাড়িতে ঘরজামাই হয়ে চলে আসেন। সুযোগ সন্ধানী জগদিস কিছুদিনের মধ্যেই শশুড়-শাশুড়ির পফিডেন্ট ফান্ডের টাকা পয়সাও তুলে নেন কোম্পানীর কাছ থেকে ।
বাবা-মা হারানোর কয়েক বছরের মাথায় অভিভাবক হিসাবে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী অপ্রাপ্ত বয়সেই শালিকার বিয়ে দিতে উদ্ধৃত হন দুলাভাই জগদিশ ভর। এরমধ্যেই জুড়ী উপজেলার সাগরনাল চা বাগানের চা শ্রমিক সনজিত ভরের সাথে বিয়ে ঠিকও করে ফেলা হয় উমার। বিষয়টি প্রথম বুঝতে না পারলেও পরে যখন উমা জানে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এক বয়স্ক পাত্রের সাথে, তখন এ ছাত্রীটি আরও লেখাপড়া করে প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করতে চায় বলে দুলাভাইকে বোঝালেও কোন কাজ না হওয়ায়, অবশেষে বাধ্য হয়ে নিজেই বাল্যবিবাহ রোধ করতে ও বিবাহের হাত থেকে রক্ষা করার সাহায্য চেয়ে রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে বাল্যবিয়ে বন্ধ ও লেখাপড়া করার সহযোগিতা চেয়ে একটি আবদেন করে। সরজমিন রোববার দুপুরে উমার বাড়ীতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি, তবে পার্শ্ববর্তী জানকি ভর,বাসন্তী ভর ও দেওমতি ভর জানান,আমরা শুনেছি ছাত্রী উমাবতির দুলাভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তার বিয়ের জন্য হলুদদান দিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার আলোচনা করতে রোববার বিকালে পাত্র পক্ষের বাড়ি সাগরনাল যাওয়ার কথা রয়েছে। ছাত্রীর আবেদন করার কথা নিশ্চিত করে মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সোবহান বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে উমার পরিবারের লোকজন খবর দিয়েছি। যদি তা বন্ধ করা হয় তাহলে আলোচনাক্রমে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমী আক্তার জানান,গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শমসেরনগর হাজী উস্তাওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর চা শ্রমিক শিক্ষার্থী শ্রাবনী করের অভিভাবকদের আলাপ করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়, এবং রবিবার দুপুরে কমলগঞ্জ পৌরসভাধীন কুমারগাঁও গ্রামের কবির মিয়ার মেয়ে কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী মুক্তা আক্তারের বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে বর পক্ষ কনে বাড়ীতে আসেনি বলে জানান তিনি।