কমলগঞ্জে পুরুষ ও নারী ইউপি সদস্যের লাঞ্চিত হওয়ার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ॥ থানায় নারী সদস্যের মামলা

প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০
ফাইল ছবি

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য কর্তৃক পুরুষ ইউপি সদস্য লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটে। চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়টি সমঝোতা হওয়ার প্রাক্কালে দ্বিতীয় দফা দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে নারী সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুরুষ ইউপি সদস্যকে অভিযুক্ত করে নারী ইউপি সদস্য গত বুধবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার দুপুরে প্রথমে উপজেলা পরিষদ এলাকায় এবং ২য় দফা বিকালে শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মানবিক সহায়তার তালিকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য শারমীন আক্তার চৌধুরীর সাথে পরিষদের পুরুষ সদস্য রুহেল আহমদ চৌধুরীর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং পরে নির্বাচন অফিসের সামনে রাস্তায় নারী সদস্য উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এসময়ে শারমিন আক্তার চৌধুরী মারমুখী হয়ে উঠলে রুহেল আহমদ চৌধুরী দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতে পেরে সমাধানের জন্য দু’পক্ষকে ইউনিয়ন অফিসে আসার কথা বলেন। বিকালে ইউনিয়ন অফিসে নারী সদস্য শারমিন আক্তার চৌধুরী পুরুষ সদস্য রুহেল আহমদ চৌধুরীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলে দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে মাটিতে পড়ে সাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে হাতে আঘাত প্রাপ্ত হন নারী সদস্য শারমিন আক্তার চৌধুরী।
প্রত্যক্ষদর্শী সমাজকর্মী জাহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, দুই জনের মধ্যে গালিগালাজ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে একটি বাইসাইকেলের দুই মাথায় ধরে দুইজন টানা হেচড়া শুরু করলে আমি তাদের সরিয়ে দেই। এসময়ে আমি নিজে আহত হই। তবে সাইকেলের নিচে ইটের মধ্যে পড়ে নারী সদস্য শারমিন আক্তার চৌধুরী কিছুটা আঘাত পান।
তবে অভিযোগ করে নারী সদস্য শারমিন আক্তার চৌধুরী বলেন, ইউপি সদস্য রুহেল আহমদ চৌধুরী ও ইউপি চেয়ারম্যানের অনিয়ম নিয়ে বুধবার দুপুরে উপজেলায় কথা বলি। এর জের ধরে ইউনিয়ন অফিসে আসার পর চেয়ার তুলে আমাকে পিটায় এবং বাই সাইকেল দিয়ে চেপে ধরে ইউপি সদস্য রুহেল আহমদ চৌধুরী। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছি।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে শমশেরনগর ইউপি সদস্য রুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, নারী সদস্য শারমিন আক্তার চৌধুরী খাদ্য বন্টনের ২টি নাম বাদ পড়ায় আমাকে অশালিন ভাষায় গালিগালাজ করেন। ইউনিয়নে এসেও আমাকে গালিগালাজ করে লাঞ্চিত করেন। নারী সদস্যের অশালিন কথাবার্তা শুনে আমি বাড়ি চলে যাই। মারধোর করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পরে নারী সদস্য শারমীন আক্তার চৌধুরী আমাকে হয়রানী করার জন্য কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শমশেরনগর ইউপি সচিব কামাল উদ্দীন বলেন, অফিসের সামনে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুনে বেরিয়ে দেখি দু’পক্ষ গালিগালাজ করছেন। কেউ কাউকে মারধর করতে দেখিনি।

শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ বলেন, ঘটনার সময় আমি ইউনিয়ন অফিসে ছিলাম না। পরে খবর পেয়ে আমি ইউনিয়ন আসলে নারী সদস্য শারমীন আক্তার চৌধুরী বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। পরে আমি তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য দিয়ে আসি।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় নারী সদস্য শারমিন আক্তার চৌধুরী গত বুধবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, এ ঘটনায় আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।