কমলগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসীর বসতভিটে দখলে নিল তদারককারী পরিবার

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসী দুই পরিবারের দুই সহোদরার বসত ভিটে দখলে নিয়ে গেছে তদারককারী পরিবার। স্থানীয়ভাবে কোন সামাজিক উদ্যোগ না মেনে দখলদার পরিবার উল্টো আদালতে মামলা দিয়েছে জমির প্রকৃত মালিক পক্ষের পরিবার সদস্যদের উপর। শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়কের সরকারি ডাক বাংলো সংলগ্ন ভাদাইর দেউল গ্রামে এ জবর দখলের ঘটনাটি ঘটে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিবলী আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে জানান, ঢাকাস্থ তার আত্মীয় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাসনাতুল হক মজুমদারের স্ত্রী জাহানারা খাতুন ১৯৭৭ সালের ২২ ডিসেম্বর অ্যাড. প্রয়াত আব্দুস সোবহানের কাছ থেকে ১৪ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন। একই সাথে তার মা জাহানার বড় বোন আলম আরা খাতুন একই তারিখে জনৈক আব্দুল মান্নান ও কাদির বক্সের কাছ থেকে আরও ১৪ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন। দুই সহোদরা জমি ক্রয় করে তাদের সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা লতিফুর রহমান লস্করের বসবাসের জন্য দুটি ঘর নির্মাণ করেছিলেন। সাথে তাদের ভাইয়ের ছেলে আপ্তাবুল ইসলাম লস্করও বসবাস করতেন এ বসতঘরে।

আলম আরা স্থায়ীভাবে ক্রয়কৃত এ বসতঘরে বসবাস করলেও তার ছোট বোন জাহানারা খাতুন মাঝে মাঝে সন্তানদের নিয়ে এখানে বসবাস করতেন। কালক্রমে আলম আরা খাতুনের দুই ছেলে যুক্তরাজ্যে চলে গেলে ও তিন মেয়ের বিয়ে দিলে এ বাড়িতে আপ্তাব লস্কর তদারককারী হিসেবে নিজের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। বিনিময়ে আপ্তাব লস্করের পরিবারের ভরণ পোষণ ও ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার ব্যয় বহন করতেন। মাঝে মাঝে আলম আরা খাতুন ও জাহানারা খাতুনের ছেলে মেয়েরা এসে এ বসভিটে অবস্থান করে আবার ফিরে যেত কর্মস্থলে।

২০১৬ সালে মূল তদারককারী আলম আরা খাতুন ও জাহানরা খাতুনের ছোট ভাই আপ্তাবুল ইসলাম লস্কর মারা যাবার পর থেকে তার স্ত্রী শামীমা আক্তার, মেয়ে সুবর্না আফরিন, ছেলে শাকিব আহমদ লস্কর ও শাহরিয়ার আহমদ লস্কর এ বসত ভিটে জবর দখল করে রাখে। গত কয়েক মাস ধরে জাহানারা খাতুন তার প্রবাসী ছেলেদের ও তিনি (প্রয়াত আলম আরা খাতুনের প্রবাসী ছেলে শিবলী আহমদ চৌধুরী)সহ মেয়েরা শমশেরনগরে আসলেও নিজেদের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। সম্প্রতি গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তারা নিজের বসত বাড়িতে প্রবেশ করলে তদারককারী শামীমা আক্তার ও তার সন্তানরা ডাকাতের আক্রমণ বলে হাল্লা চিৎকার করে তাদেরকে মারধর করে। মারধরের পর আবার শামীমা আক্তার এ বাড়িতে এক রাতে সাংবাদিক ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন এ জমির প্রকৃত মালিক তার প্রয়াত শ্বশুর লতিবুর রহমান লস্কর ছিলেন। তাই তিনি এ বসত ভিটেতে অবস্থান নিয়েছেন। মারধর করে ক্ষান্ত থাকেনি তদারককারী পরিবার। তদারককারী শামীমা আক্তার বাদি হয়ে মৌলভীবাজার আদালতে পর পর দুটি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন।

জাহানারা খাতুন ঢাকা থেকে মুঠোফোনে বলেন, তার বাবা লতিফুর রহমান লস্কর অবসরে গেলে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে ফসলি জমিসহ তার নামে বসতভিটে কিনেছিলেন। গ্রামে তাদের (জাহানারা ও আলম আরার) ছেলে মেয়রা যাবে না বলে তারা দুই বোন মিলে শমশেরনগর সদরে ডাকবাংলোর সামনে মোট ২৮ শতক জমি কিনে বসত ঘর নির্মাণ করে বাবা ও ভাইকে তদারককারী হিসেবে রেখেছিলেন। ভাই আপ্তাব লস্কর জীবিত থাকা অবস্থায় কোন সমস্যা না হলেও ২০১৬ সাল তিনি মারা যাবার পর থেকে তার স্ত্রী সন্তানরা এ বসতভিটে দখল করে রেখেছে।

শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, দলিল মূলে এ জমির মালিক আলম আরা খাতুন ও জাহানারা খাতুন। তাদের নামে শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডেও ৫৯২ নম্বও হোল্ডিং নম্বরও রয়েছে। জমির দখলদাররা পরিবার তাদের আত্মীয়। প্রবাসী শিবলী আহমদ চৌধুরী দেশে ফিরে একবার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সামাজিক বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে দখলদার শামীমা আক্তার তার প্রস্তাবে রাজি হননি।

শামীমা আক্তারের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন জমির দলিলমূলে মালিক হচ্ছেন আলম আরা খাতুন ও জাহানারা খাতুন।