কুরআন সেবক যে সাহাবির নাম উচ্চারিত হয়েছিল আরশে

প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

ধর্ম ডেস্ক: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সহচরদের বলা হয় সাহাবি। সব সাহাবিই কোনো না কোনো কারণে বা ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আনসার সাহাবি হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। আরশে আজিমে যার নাম উচ্চারিত হয়েছিল।

হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা লাভের অন্যতম একটি কারণ হলো- তিনি ছিলেন মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিমের প্রসিদ্ধ ক্বারি ও প্রশিক্ষক। তিনি কাতেবে ওহি তথা ওহি লেখকদের অন্যতম একজন ছিলেন।

তিনি প্রিয় নবি সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল হওয়া কুরআন লিখে রাখতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায়ই তিনি কুরআন সংগ্রহ ও তা নিজের কাছে সংরক্ষণ করতেন।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনায় (পূর্ব ইয়াসরিব) বনু খাজরাজ গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম হলো আবুল মানজার উবাই বিন কাব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু। সুনির্দিষ্ট জন্ম তারিখ জানা না গেলেও তিনি মদিনাতেই বেড়ে ওঠেন। তিনি মদিনার মর্যাদাপূর্ণ দ্বিতীয় ‘বাইতুল উকবা’য় অবস্থান করতেন।

ইসলাম গ্রহণ
তিনি ছিলেন আকাবা শপথের সময় ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা হিজরতের আগেই তিনি একজন আনসার হয়েছিলেন।

কাতেবে ওহি
কুরআনের প্রসিদ্ধ ক্বারি শুধু কুরআনের খেদমত, ইসলামের দাওয়াতপত্র লেখার দায়িত্বও তিনি পালন করেন। তিনি ওহির মাধ্যমে পাওয়া কুরআন লেখার কাজ করতেন। আর তা সংগ্রহ করার দায়িত্বও পালন করতেন।

তিনি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ইসলামের বিজয় নিশান উড়াতে যোগ দিয়েছেন বদর, ওহুদসহ বিশ্বনবি পরিচালিত সব যুদ্ধে।

হাফেজে কুরআন
হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই অল্প কয়েকজন সাহাবির অন্যতম একজন, যিনি কুরআনের সুরা লেখতেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের আগেই তিনি কুরআনের হাফেজ ছিলেন। তার নিজের লেখা একটি মুসহাফও ছিল।

কুরআনের প্রশিক্ষক ও ক্বারি
তার সময়ে তিনি কুরআনের সবচেয়ে সেরা তেলাওয়াতকারীদের একজন ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার সুন্দর কুরআন তেলাওয়াতের স্বীকৃতি দেন। মদিনার অন্যদেরকে তার কাছে কুরআন শেখতে উৎসাহিত করেন। তাইতো তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে হাদিসের ওপর আমল করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম (ব্যক্তি) সে, যে কুরআন শিক্ষা দেয় এবং নিজে শেখে।’

মদিনার সাহাবারা হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে কুরআন শিখতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর হজরত উবাই ইবনে কাব-ই তারাবিহ নামাজের ইমামতি করেন।

কুরআনের খাদেম উবাই ইবনে কাব শুধু ক্বারিই ছিলেন না , তিনি ছিলেন সমসাময়িক বিষয়ের ওপর ফিকহি সমাধানের অন্যতম একজন। বুখারির বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, ‘আল্লাহ তোমার কাছে আমাকে পাঠ করতে বলেছেন…। হজরত উবাই জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আমার নাম বলেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হ্যাঁ। উত্তর শুনে হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কাঁদতে শুরু করলেন।’

অনেকের মতে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ক্বারি হিসেবেও স্বীকৃতি দিতেন।

কুরআন সংকলন
শুধু তাই নয়, তিনি কুরআন সংকলনকারী দলের একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন। যখন খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা সূষ্টি হয়েছিল। কুরআন সংকলনকারী দলের সদস্যরা ছিলেন- হজরত ওমর, উসমান, আলি, আব্দুর রহমান বিন আওফ, মুয়াজ ইবনে জাবাল, জায়েদ ইবনে সাবিত ও উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন।

ইন্তেকাল
কুরআনের খাদেম ও ক্বারিদের অন্যতম, কাতেবে ওহি ও ফকিহ হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ৬৪৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৩০ হিজরিতে খেলাফতের যুগে ইন্তেকালকরেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের শেষ ভাগে বা হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলের শুরুর দিকে ইন্তেকাল করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আবুল মানজার উবাই বিন কাব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো কুরআনের অনুরাগী, কুরআন প্রেমিক ও কুরআনের খাদেম হিসেবে কবুল করুন। কুরআনের প্রচার ও প্রসারে নিজেদের আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।