খালেদাকে মুক্তি দিয়ে বন্যা-ডেঙ্গু মোকাবিলা করুন : রিজভী

প্রকাশিত: ৫:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আওয়ামী লীগ উপহাস করছে মন্তব্য করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল শনিবার দেশনেত্রীকে যখন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লক থেকে হুইল চেয়ার থেকে নামিয়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখন দুইজনে ধরেও তাকে দাঁড় করাতে পারেনি। কষ্টে কাতরাচ্ছিলেন তিনি। হুইল চেয়ারেও বসতে পারছিলেন না, কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন।’

রিজভী বলেন, ‘টেলিভিশনের পর্দায় দেশনেত্রীর এই ভয়ংকার অসুস্থতার দৃশ্য দেখার পর অশ্রুশিক্ত হয়েছেন অগণিত মানুষ। আর দেশনেত্রীর এহেন অসুস্থতায় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে আনন্দ ঝরে পড়ছে। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পক্ষ থেকে সরকারি বার্তাই জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবে বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু সরকার সেটি অগ্রাহ্য করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপি এবং দেশবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে তার পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হোক। তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। তাকে বাঁচতে দিন। দেড় বছর তো বিনা অপরাধে সাজা খাটালেন। এবার প্রতিহংসা-ঈর্ষা বন্ধ করুন। তাকে মুক্তি দিয়ে বন্যা-ডেঙ্গু মোকাবিলার চেষ্টা করুন।

রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ এই রাতের অন্ধকারের সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রলাপ বকছে। বর্তমানে যেকোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় গুজব। সরকার ডেঙ্গু দমনে ব্যর্থ হয়ে ছেলেধরা গুজবের মতো ডেঙ্গুজ্বরকেও গুজব বলছে। ডেঙ্গুতে মানুষ মরছে, মরছে চিকিৎসক, মরছে শিশুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা। এ পর্যন্ত সিভিল সার্জনসহ কয়েকজন ডাক্তার মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। আর সরকারি দলের নেতাসহ মেয়ররা জনগণকে ধমক দিচ্ছেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার।’

এদিকে ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস একটা গুজবের ফ্যাক্টরি’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা জাতির সামনে তুলে ধরা, সরকারের লুটপাট ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা, শেয়ারবাজার লুট নিয়ে কথা বলা, গত ৬ মাসে শেয়ারবাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা মূলধন উধাও নিয়ে কথা বলা, ব্যাংকলুটের কথা বলা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা, বিরোধীদলের ওপর সরকারি নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলা, নারী-শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি গুজব?’

তিনি বলেন, ‘সেতুমন্ত্রীর ভাষায় দুর্নীতির উন্নয়নের পালকি এগিয়ে যাওয়ার কথাই কি শুধু বলতে হবে? গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দেশে আইয়ুব খান মডেলের উন্নয়নের জয়গানই কি গাইতে হবে? মনে হয় তাহলেই সেতুমন্ত্রীরা খুশি থাকবেন। তবে যে বাতাবরণটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবর্তিত হচ্ছে তাতে শত জুলুমের মুখেও বিএনপি সত্য উচ্চারণ করে যাবে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘চারদিকে বিদ্যমান ভয়ংকর অরাজকতা দূর করতে জনগণের প্রলয় সৃষ্টি হবেই। আর আপনারা অন্ধ হলেও সেই প্রলয় বন্ধ হবে না। এই ভয়ংকর নাৎসি শাসনের অমানিশার মধ্যে বিএনপিই কেবল জনগণের আশা-ভরসার উদিত একটি আলোকবিন্দু।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, সহ-দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।