খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ (সামারিলি রিজেক্ট) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জামিন সংক্রান্ত আবেদনের ওপর গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আজ (বুধবার) শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।

আদালতে এদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবউদ্দীন খোকন। সহযোগিতায় ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কমাল, আমিনুল ইসলাম, রাগিব রউফ চৌধুরী, মির্জা আল মাহমুদ, আখতারুজ্জামান, আনিছুর রহমান খান, সগীর হোসেন লিয়ন, এ কে এম এহসানুর রহমান, নওশাদ জমির, মীর হেলাল, ফাইয়াজ জিবরান, আতিকুর রহমান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরও উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জামির উদ্দিন সরকার। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবীর খোকন প্রমুখ।

শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে বলেন, যে আইনে খালেদা জিয়ার সাজা দেয়া হয়েছে সেখানে সাজা বাড়ানোর সুযোগ নেই। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে। উনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বয়স্ক মহিলা এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ। পালিয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই। আমরা মামলার ম্যারিটে যাচ্ছি না। তাকে জামিন দেয়া হোক। এ আদালতের জামিন দেয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারও বলছে খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে আদালতে ওপর। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে আদালতের ওপর।

খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে আদালত বলেন, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের এক না। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বড় পদে থেকে দুর্নীতি করেছেন, অতএব তার অপরাধ ছোটভাবে দেখা যায় না।

তখন খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের উপমহাদেশে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয়েছে। ভারতের জয় ললিতাও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। লালু প্রসাদ যাদবও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাদেরও দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়েছিল, সেই ক্ষেত্রেও তাদের জামিন দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াও জামিন পেতে পারেন।

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়া যেদিন জেলে গেছেন পায়ে হেঁটে গেছেন। আর এখন হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেন না। তিনি দীর্ঘদিন জেলে, দীর্ঘদিন অসুস্থ। পিজিতে তার চিকিৎসা হচ্ছে। উনার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেছেন, তার আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি আদালতে উপস্থিত শতাধিক আইনজীবীদের দেখিয়ে বলেন, এ আইনজীবীরাও খালেদা জিয়ার পক্ষে দাঁড়াতে এসেছেন। যেকোনো বিবেচনায় আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ সময় জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, সাজা হয়েছে দুদক আইনের ৫-এর ২ ধারায়। পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে সাজা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলেন।

গত ২৮ জুলাই খালেদা জিয়ার আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বেঞ্চ জামিন শুনানির জন্য (৩০ জুলাই) মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। এরপর দুদিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।

গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

ওইদিন আপিল শুনানি গ্রহণের পর জয়নুল আবেদীন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি করতে গেলে আদালত বলেছিলেন, আগে নথি আসুক। তখন দেখা যাবে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক। রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।

বিচারিক আদালতের দেয়া ওই সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া। এর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।

একই সঙ্গে, ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করে বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির নথি তলব করেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে নথি পাঠাতে বলা হয়। বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি গত ২০ জুন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। এর ধারাবাহিকতায় (৩০ জুলাই) জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।