গাজীপুরে ডায়রিয়ায় ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত তিন শতাধিক

প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
ছবি সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা ও কাজীবাড়ি এলাকায় এক শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। গত পাঁচ দিনে এ বিপুল সংখ্যক মানুষের ডায়রিয়া আক্রান্তের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ঢাকা রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আর পাঁচ দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩০৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী।

সরেজমিনে জানা গেছে, কাজীবাড়ি এলাকার মোস্তফার বাড়ির ভাড়াটিয়া মোজাম্মেল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার (২০) রোববার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান।

একই এলাকার আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া আ. জব্বার ওরফে খেজু মিয়া (৭০) সোমবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। তাকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিনি মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হোসেনপুর থানার বাঘমারা গ্রামে।

অন্যদিকে পূর্ব চান্দনা এলাকার হাছেন আলী জানান, তার শ্যালক আলী আকবরের স্ত্রী সুমা (৩০) সোমবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা কলেরা হাসপাতালে নেয়র পথে রাত ৮টার দিকে মারা যান।

একই এলাকার সাত্তার বাবুর্চির বাড়ির ভাড়াটিয়া আ. সালাম (৫৫) সোমবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার কলেরা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ওই হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে।

পূর্ব চান্দনা এলাকার বাতেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মঞ্জু মিয়ার দুই ছেলে নাহীন (৪ মাস) ও ফাহিম (দেড় বছর) মঙ্গলবার বিকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহীন মারা যায়। ফাহিম ঢাকার কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা গেছেন। ঢাকা থেকে রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ডা. দেবাশীষ সাহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা বেশ কয়েকটি স্থান থেকে পানির নমুনা নিয়ে গেছেন। পানির নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, যে দুটি এলাকায় এ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সে এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক লিফলেট, পাঁচ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন পাঠানো হয়েছে। স্যুয়ারেজের লাইন পানির লাইনের সঙ্গে মিশে গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, চারদিন ধরে ওই দুটি এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পানি সরবরাহ লাইনে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। পানির মেইন লাইন থেকে সরবরাহ লাইনের পানিতে ব্লিসিং পাউডার দেয়া হচ্ছে। পানির পাইপগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এরপরও পানির লাইনে কোনো ত্রুটি আছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে।