ফলো আপ: কমলগঞ্জে বখাটের উৎপাতে কিশোরীর আত্মহত্যা! থানায় মামলা ॥ বখাটে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২০
প্রতিকী ছবি

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর গ্রামে বখাটের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে সঞ্চিতা শব্দকর (১৪) নামে এক কিশোরীর আত্মহত্যা ঘটনায় বখাটে মধু মিয়া (২৮) এর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধে থানায় মামলা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতেই নিহত কিশোরীর পিতা ব্রজেন্দ্র শব্দকর বাদী হয়ে শ্রীনাথপুর গ্রামের ইন্তাজ মিয়ার ছেলে বখাটে মধু মিয়াকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন (মামলা নং ০৫, তাং ১২/০৫/২০২০)। আটক মধু মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার সকালে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় কমলগঞ্জ উপজেলার ৬নং আলীনগর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর শব্দকর পাড়ার ব্রজেন্দ্র শব্দকরের মেয়ে সঞ্চিতা শব্দকর বখাটে মধু মিয়ার উৎপাত সহ্য করতে না পেরে নিজ বসতঘরে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঘরের চালার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। বখাটে মধু মিয়া গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

কমলগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, শ্রীনাথপুর গ্রামের প্রতিবেশী ইন্তাজ মিয়ার বখাটে ছেলে মধু মিয়া (২৮) দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিতাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। সে এই কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে বিয়ে করারও হুমকি দিয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে বখাটে মধু মিয়া লাঠি হাতে নিয়ে ব্রজেন্দ্র শব্দকরের উঠানে এসে হাল্লা চিৎকার করে সঞ্চিতা শব্দকরকে তার (মধু মিয়া) সাথে বিয়ে না দিলে জোরপূর্ব্বক অপহরণ করে ইজ্জত হরণ করবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বখাটে মধু ব্রজেন্দ্র শব্দকর ও তার স্ত্রী রীনা শব্দকরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ব্রজেন্দ্র শব্দকর এ ঘটনার বিচার প্রার্থী হওয়ার জন্য মধুর পিতার কাছে যান। এদিকে রীনা শব্দকর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে শৌচাগারে গেলে মধু মিয়ার কুরুচিপূর্ণ কথা ও সম্ভ্রমহানির হুমকির কারণে অভিমান করে নিজ বসতঘরে সঞ্চিতা শব্দকর গলায় ওড়না পেছিয়ে বাঁশের তীরের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক অনীক বড়–য়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিহত সঞ্চিতার লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠায়।

কিশোরীর বাবা ব্রজেন্দ্র শব্দকর অভিযোগ করে বলেন, ইতিপূর্বেও একাধিকবার আমার মেয়ে সঞ্চিতাকে বখাটে মধু মিয়া নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছিল। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার প্রার্থী হই। বিভিন্ন সময়ে আমার বসতগৃহে এসে আমার মেয়েকে অপহরণের হুমকিও দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ নিয়ে যাওয়ার পর দা নিয়ে বখাটে মধু মিয়া শব্দকর পাড়ায় এসে প্রকাশ্যে নিহতের বাবাকে বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকি দেয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (শ্যামল) বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে বখাটে মধু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস, আলীনগর ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি শংকর চন্দ্র দেবনাথ, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমরেন্দু সেনগুপ্ত বুলবুল, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, শব্দকর সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রতাপ শব্দকর, সাধারণ সম্পাদক উপেন্দ্র শব্দকর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ শ্রীনাথপুর গ্রামে ব্রজেন্দ্র শব্দকরের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।

আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা আত্মহত্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইন্তাজ মিয়ার ছেলে মধু মিয়া আসলেই একটি বখাটে। তিনি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক অনীক বড়–য়া জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই নিহত কিশোরী সঞ্চিতার পিতা ব্রজেন্দ্র শব্দকর বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধে মধু মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। আটক বখাটে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এদিকে বখাটে মধু মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামী মধু মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাতে প্রেরণ করা হয়েছে।