ফাগুয়া উৎসবে রঙে রঙ্গিন চা জনগোষ্ঠীর বহুমাত্রিক ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ১০:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২০
ছবি ধলাইর ডাক
সাজু মারছিয়াং: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে চা জনগোষ্ঠীর বহু মাত্রিক অনুষ্ঠান সমূহ নিয়ে প্রথম বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ফাগুয়া উৎসব ২০২০।

বছরের বেশ কটি উৎসবের মধ্যে এই উৎসবটি চা জনগোষ্ঠীর অন্যতম বড় উৎসব। চা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের সংগ্রামী জীবনের মধ্যেও প্রতিবছর বেশ আনন্দের সাথে সন্তান পরিজন প্রতিবেশীদের নিয়ে এই উৎসব পালন করেন। এই ফাগুয়া উৎসব পালনে চা জনগোষ্ঠীর প্রতিটি পরিবারের মধ্যে আনন্দের কমটি নেই আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে উৎসবটি প্রতিটি চা বাগানে উদযাপন করা হয়।
প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধন রেখে চা বাগানে প্রতিটি ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে ফাগুয়া উৎসব। লাল, হলুদ, নীল, রংয়ের ছড়াছড়িতে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী নারী পুরুষ এখন মাতোয়ারা ফাগুয়া উৎসবে।
বর্তমানে ভূমিজ, মুন্ডা, বারাইক সহ চা বাগানে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সকলেই ফাগুয়া উৎসব বেশ আনন্দের সাথে উদযাপন করে থাকে। ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমায় উৎসবটি পালিত হয়।
এই উৎসবে তারা ঝুমুর নৃত্য, লাঠি নৃত্য, হোলী গীত, ডাল নৃত্য,  সহ মনমুগ্ধকর অনেক নৃত্য পরিবেশন করে। এই অঞ্চলের চা জনগোষ্ঠীরা একটু ব্যতিক্রমভাবে প্রতি বছর এ উৎসব পালন করে থাকে।
ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরের পর থেকে শ্রীমঙ্গলের  ফুলছড়া চা বাগান ফুটবল মাঠে  সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা বাগান থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি।
এসময় আরোও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুছ ছালেক, বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অবিনাশ আচার্য, ফিনলে কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন এ চৌধুরী,সিন্দুরখান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হেলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব, ফিনলে কোম্পানির বালিশিরা ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ফিনলে কোম্পানির ফুলছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক নিয়ামুল হক,মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহি কুটি, সহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে রাজঘাট চা-বাগানের পক্ষে পরিবেশন করা হয়েছে উড়িষ্যার পত্রসওরা ও নৃত্যযোগী-যোগিয়ানী নৃত্য, কেজুরীছড়া চা-বাগানের উড়িষ্যার চড়াইয়া নৃত্য, লাখাইছড়া চা-বাগানের ভূমিজের ঝুমুর নৃত্য ও মুণ্ডাদের লাঠি নৃত্য, কালীঘাট চা-বাগানের উড়িষ্যার হাড়ি নৃত্য, ফুলছড়া চা-বাগানে উড়িষ্যার পালা নৃত্য, মাকড়িছড়া চা-বাগানের সাঁওতাল ডং ও নাগরে, সিন্দুরখান চা-বাগান উড়িষ্যার ভজনা ও মঙ্গলা নৃত্য, সাতগাঁও চা-বাগান ভোজপুরী গুরুভজন-হোলি গীত, সাইটুলা গ্রামের মাহাতো কুর্মীর লাঠি নৃত্য ও ঝুমুর নৃত্য, খান চা-বাগান বাড়াইকের ফাগুয়া, করম ও দলীয় ঝুমুর নৃত্য সাদরী, শমসেরনগর চা-বাগান তেলেগু লাঠি ও ডাল নৃত্য, দেওন্দী চা-বাগানের প্রতীক থিয়েটার নাটক মঞ্চায়ন করবে এবং আলীনগর চা-বাগান পরিবেশন করেছে ভোজপুরী/দেশওয়ালী হোলি গীত ও বিরহা।