শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবৈধভাবে বালুর ঘাট থেকে অবাদে চলছে বালু উত্তোলন। এর মধ্যে উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের আমরাইলছড়া, উদনাছড়া ও মুড়াছড়ায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এসব বালুর ঘাট থেকে দিন রাত বালু তুলার ফলে হুমকিতে পড়েছে পাকা সড়ক, সেতু, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব বালুর ঘাট থেকে ইজারা ছাড়াই দিনের পর দিন অপরিকল্পিতভাবে দৈনিক শ্রমিক দিয়ে তুলা বালু থেকে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের আমরাইলছড়া, উদনাছড়া মোড়াছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমরাইল ছড়ার পাশে একটি বড় লেবু বাগানে ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে রাখা হয়েছে।
ছড়া থেকে বালু তুলার ফলে ছড়ার অনেক জায়গায় গর্ত তৈরী হয়েছে। উদনাছড়া থেকে থেকে বালু তুলে রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে। মোড়াছড়ার বালু খিলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে জমাট করে রাখা হয়েছে। এই অবৈধ বালুগুলো বিক্রির জন্য গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে দিনরাত ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে গ্রামের রাস্তাগুলো অবৈধ বালুবাহী ট্রাকের কারনে ভেঙ্গে যাচ্ছে।
সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বসির মিয়া অভিযোগ করে বলেন, দূর্গানগর গ্রামের সৈয়দ আলী, রুবেল মিয়া ও গোলগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়া, জসিম মিয়াসহ এই তিনটি ছড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ ট্রাক করে বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করছে। তাদের সাথে শহরের প্রভাবশালী মহল থাকায় এলাকার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না।
তিনি বলেন, সাতগাঁও-খারিউজ্জামা রাস্তায় এভাবে অবৈধভাবে বালু বাহী এক ট্রাকের চাপায় অষ্টম শ্রেনী পড়–য়া এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। লাহারপুর-গাজীপুর রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। বালুর ট্রাকগুলো এতই বেপরোয়া যে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
গ্রামীণ রাস্তার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট আর একটি ট্রাকের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। রাস্তা দিয়ে যখন অবৈধ বালু বোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে তখন বাচ্চারা রাস্তা থেকে নেমে উঁচু-নিচু জায়গায় দাড়িয়ে ট্রাকটি পাস দিতে হয়।
আমি এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ করেছি। এখন জেলা প্রশাসকের কাছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। এই বালু বন্ধের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসক ভুতত্ববিধ ও পরিবেশবাদীদের সাথে আলোচনা করে বালু তুলার জায়গা নির্ধারন করে দেন। কেননা ছড়াগুলো পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। যে কোন জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের কারনে ভুমিধ্বসসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। পরিবেশ রক্ষায় এসব অবৈধবালুর ঘাট থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. শাহিদুল আলম বলেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান প্রতিনিয়তই হচ্ছে। বালু জব্দ করা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। এই বালু মহাল গুলোর খবর নিয়ে আমরা অভিযান চালাবো।