সচেতনতায় এগিয়ে যৌনকর্মী, পিছিয়ে খদ্দের

প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯
ফাইল ছবি

ধলাই ডেস্ক: কিশোরী বয়সে এ পথে নামি। মায়ের কাছ থেকেই এ পথে আসা। প্রথম প্রথম জেনেছি মায়ের কাছেই। এরপর এনজিওর মাধ্যমে। প্রতিদিন দশের অধিক খদ্দের সামলাই। কনডম ছাড়া একটি কাজও করি না। খদ্দের না আসে, নাই। আমার শরীর আমাকেই রক্ষা করতে হবে। বেশ্যা হতে পারি, রোগের সঙ্গে আপস করতে পারি না।

যশোর যৌনপল্লীর প্রীতি (ছদ্মনাম) নামের এক কর্মী ঠিক এভাবেই নিজের সচেতনতার কথা জানালেন। ১৪ বছর বয়সে এ পাড়ায় এসেছেন তিনি। মায়ের মৃত্যু হয়েছে দুবছর আগে। মায়ের হাত ধরেই এখানে আসা। এরপর আর ফেরা হয়নি অন্ধকার এ গলি থেকে। আগে পল্লীতেই থাকতেন রাতদিন। এখন দিনে কাজ করেন, রাতে স্বামীর সঙ্গে শহরের ভাড়া বাসায় থাকেন।

সম্প্রতি যশোর শহরের মন্দিরের কাছে বহুল পরিচিত যৌনপল্লীতে সাক্ষাৎ মেলে প্রীতির। পরিচয় দিয়ে এইডস সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেন এ নারী। বলেন, ‘বেশ্যার শরীরকে অনেকেই ভয় পায়। অথচ, আমি খদ্দেরের শরীরকে ভয় করি। কনডম ছাড়া একটি কাজও করি না। লাখ টাকা দিলেও করব না। কার শরীরে কি আছে, তা তো আগে থেকে জানা যায় না। আর রোগ হয়ে গেলে জেনেই বা কি লাভ! এ কারণে এখন পর্যন্ত কনডম ছাড়া কাজ করিনি।’

তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে রোজ খদ্দেরের সঙ্গে ঝগড়া হয়। কেউ কেউ গায়ে হাতও তোলে। আবার কেউ টাকার লোভ দেখায়। পাত্তা দিই না। সুযোগ পেলে আমিও ঝেঁটিয়ে বিদায় করি। আমার শরীর, আমাকেই ভালোবাসতে হবে।’

পাশে বসে থাকা দোলা নামের আরেক জন বলেন, ‘খদ্দেরদের সবাই সমান না। বেশির ভাগই কনডমে কাজ করেন। আবার কেউ কেউ এমনিতেই কাজ করতে চান। আমাদেরও হয়তো আর উপায় থাকে না। যৌনকর্মীদের অনেকেই খদ্দেরের জোরাজুরিতে রাজি হয়।’

বেসরকারি বিদেশি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে ছয় বছর আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দোলা। কনডম পেয়ে থাকেন এনজিওগুলো থেকেই। কখনও কখনও নিজেই কিনে আনেন। বলেন, ‘আমি চাইলেই প্রীতির মতো শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকতে পারি না। শরীর আর আগের মতো নেই। নেশার টাকা, ঘর ভাড়া, খাবারের টাকা জোগাড় করতে হয়। এ কারণে খদ্দেরের কথাই আমার কথা। খদ্দের সচেতন থাকলে আমাদের আর ভয় থাকে না। সবার বেঁচে থাকার জন্যই সতর্ক থাকা উচিত। অথচ এক্ষেত্রে সব দোষ যৌনকর্মীদের। খদ্দেরের আচরণ নিয়ে কেউ জানতে পারে না।’

যৌনকর্মী এবং এইডস সচেনতা প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাওয়া হয় এইডস এসটিডি প্রোগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক সামিউল ইসলামের কাছে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণের মধ্যে যৌনপল্লী নিয়ে অন্যরকম ধারণা থাকলেও আমাদের কাছে যৌনকর্মীদের মধ্য থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে, তা মনে করি না। এর কারণ হচ্ছে যৌনকর্মীরা এখন অনেক সচেতন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই জনগোষ্ঠীকে নানাভাবেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আর এটি করতে হচ্ছে আমাদের স্বার্থেই। একটি জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে আপনি সবাইকে সুরক্ষা দিতে পারবেন না। এইডস থেকে রক্ষায় সরকার বিনামূল্যে কনডম দিচ্ছে। এতে করে অনেক যৌনরোগ থেকেও রেহাই মিলবে।’

বিশেষ জনগোষ্ঠীকে কনডম ব্যবহারে উৎসাহিত করা এবং সঠিকভাবে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে এনজিওগুলো দিয়ে আসছে বলেও জানান তিনি।

সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এইডস আক্রান্ত নব্বই ভাগ রোগীকে শনাক্ত করা এবং তার মধ্য থেকে ৯০ ভাগ রোগীকে সেবার আওতায় আনা। আর এটিই হচ্ছে বিশ্ব ধারণা। আমরা এখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও সহায়তা পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘যৌনজীবন থেকেই একমাত্র এইডসের বিস্তার নয়; নানা কারণেই এইডসের বিস্তার ঘটছে। এটি বোঝাতে পারাই হচ্ছে আমাদের সফলতা।