কমলগঞ্জ সংবাদদাতা: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের জালালিয়া গ্রামে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে এক প্রেমিকা প্রেমিকের বাড়ির বারান্দায় বসে অনশন করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জালালিয়া গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে দুবাই প্রবাসী ইয়াওর আলীর সাতে নরসিংদী জেলার খালার চর ইউনিয়নের মানারা কান্দি গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের মেয়ের (রিমা আক্তার) সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে একই কোম্পানিতে দুজন কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুজন দেশে এসে নরসিংদি আদালতে কোর্ট ম্যারেজ এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই তারিখে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মাস দেড়েক নরসিংদীতে প্রেমিক একটি বাসা ভাড়া রেখে দুজন ঘর সংসার করে আবার দুজন বিদেশ পাড়ি জমায়।
সেখানে গিয়ে মেয়ের সরলতার সুযোগে তার রোজগারের সমস্ত প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা তার কাছে রেখে পরিপূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বামীর বাড়িতে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্ত্রীকে দেশে পাঠিয়ে দেয় স্বামী ইয়াওর আলী। স্ত্রী রিমা আক্তার স্বামীর এমন কথা শুনে সরল বিশ্বাসে দেশে আসার পরে বারবার চেষ্টা করেও আর স্বামীর সাথে মুঠোফোনে বা ইমু মারফতে যোগাযোগ করতে পারেননি। যোগাযোগ সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন করে দেয় স্বামী ইয়াওর। স্ত্রী রিমা আক্তার দুবাইয়ের কোম্পানির অন্যান্য লোক মারফত জানতে পারেন যে তার স্বামী কিছুদিন আগে দেশে এসেছে। এ খবর পেয়ে কোর্ট ম্যারেজকালীন সময়ে স্বামীর দেয়া এ এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মোবাইল ও স্বামীর পারিবারিক মোবাইলে এবং স্থানীয় মেম্বার হায়দার আলীর মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে মেয়ে মেম্বারসহ এলাকার লোকজনকে বিস্তারিত জানায়।
অবশেষে গত ২৬ জুলাই শুক্রবার দুপুর ২ টা থেকে কমলগঞ্জের জালালিয়া গ্রামে স্বামীর বাড়ির বারান্দায় এসে স্ত্রীর পরিপূর্ণ মর্যাদা দেয়ার দাবীতে অনশন শুরু করেন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং দফায় দফায় ছেলে পক্ষের সাথে মেয়ে পক্ষের এ এলাকায় অবস্থানকারী আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিষয়টি মীমাংসার জন্য গ্রাম্য মাতব্বররা সালিশ বৈঠক বসান। প্রভাবশালী ছেলে-মেয়েকে দেখামাত্র মেয়ের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে মেয়েকে লাঞ্চিত করার খবরও এলাকাবাসী সূত্রে পাওয়া যায় এবং পরে ঘটনা বেগতিক দেখে ছেলে গত ৬ মাস আগে পাশের মথুরাপুর গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ করা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে এ এলাকায় কিছুদিন যাবত ছেলেধরা গুজব এবং দেওড়াছড়া চা বাগান এলাকায় একজন বৃদ্ধাকে পিটিয়ে নিহত করার ফলে প্রভাবশালী পরিবারটি শনিবার দুপুরের দিকে মেয়েটিকে এ বিষয়কে কাজে লাগিয়ে গণপিটুনি দিয়ে স্বামীর বাড়ির বারান্দা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এমন খবর এলাকাবাসী সূত্রে পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ওই বাড়িতে গেলে মেয়েটি সেখান থেকে রক্ষা পায়। শনিবার রাত ৮টায় আবারো স্থানীয় ইউপি সদস্য হায়দার আলীর বাড়িতে বিষয়টি আপোস মীমাংসার জন্য মেয়েকে নিয়ে সালিশ বসে। মেয়েকে প্রভাবশালী পরিবার তার বাবা-মা বা কোন ধরনের অভিভাবক এলাকার জনপ্রতিনিধি নিয়ে আসতে জানালে মেয়েটি তার বাবা মা অসুস্থ বলে জানায়।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে মেয়েটি কমলগঞ্জ থানা পুলিশের শরণাপন্ন হবে জানালে প্রভাবশালী পরিবারটি পুলিশি ভয়ে মেয়েটিকে আবারো তাদের জিম্মায় নিয়ে যায়। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেয়েটি ওই বাড়িতেই অবস্থান করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে স্থানীয় ইউপি সদস্য হায়দার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা বিষয়টি মেয়ের সাথে থাকা কাগজপত্র দেখে বারবার সমাধান করার জন্য স্বামীর পরিবারকে অনুরোধ করলেও তাতে তারা কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি।
স্বামীর পরিপূর্ণ মর্যাদা পাওয়ার দাবিতে অনশনকারী মেয়ে রিমা জানায়, পরিবারের শাশুড়িসহ অন্যান্য লোকজন তাকে বাড়ি থেকে সরে যাবার জন্য বার বার হুমকি দিচ্ছে। এতে করে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। স্বামী ইয়াওর আলীর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।