১৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা গেল নৈশপ্রহরী শ্রী প্রসাদ

প্রকাশিত: ৪:১৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২২

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়ন এর সীমান্তবর্তী দলই চা বাগানের মূল কার্যালয়ে দূর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে অগ্নিদগ্ধে আহত হয়েছিল দুই নৈশপ্রহরী। তাদের মধ্যে দূর্বৃত্তদের হামলায় ও অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর আহত হয় নৈশপ্রহরী শ্রী প্রসাদ পাশি।

প্রথমে তাকে সিলেট রাগিব রাবিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে রেপার করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে। সেখানে ১৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রোববার (১০ জুলাই) ভোরে শ্রী প্রসাদ মারা যায়। নিহত শ্রী প্রসাদ দলই চা বাগানের নতুন লাইন এলাকার বলুয়া পাশীর ছেলে।

এদিন রাতে শ্রী প্রসাদের মরদেহ চা বাগানে পৌঁছালে বিক্ষোব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ চা শ্রমিকরা। এসময় তারা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে নিহত পরিবারের জন্য ৬ দফা দাবী উপস্থাপন করা হয়। দাবী না মানা পর্যন্ত মরদেহ অন্তেষ্টিক্রিয়া করা হবে না বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়।

খবর পেয়ে সোমবার (১১ জুলাই) সকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী,মাধবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসিদ আলি, সাবেক চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু,বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি পংকজ কুন্ড, কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিঞ্জি, ভেলী সভাপতি ধনা বাউরী , সম্পাদক নির্মল পানিকা, বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি কিশোন পাশী অপরদিকে দলই চা বাগানের ডিপুটি ম্যানেজার মহসিন পাটুয়ারী,ব্যবস্থাপক আলি আজগরসহ বাগান কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থ চা কারখানার সামনে আলোচনা সভায় বসেন।

এসময় চা শ্রমিকের পক্ষ থেকে নিহত শ্রী প্রসাদের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা, বাগানে স্থায়ী নাম অন্তর্ভুক্তকরণ সৎকাজ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা নিজ দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নিহত শ্রী প্রসাদের নাম করণে কারখানা সম্মুখে স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা, ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান,কোন নিরীহ চা শ্রমিক দের হয়রানির শিকার না করাসহ ৬ টি দাবী উপস্থাপন করা হয়। সমআইনে ক্ষতিপুরণসহ প্রাথমিক দাবী-দাওয়া কর্তৃপক্ষ মেনে নেয়ায় বিকাল সাড়ে তিন টায় কারখানার সামন থেকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য শ্রী প্রসাদের মরদেহ শ্রমিক লাইনে তার বাড়িতে নেয়া হয়।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে করা দাবী বাগান কর্তৃপক্ষ মেনে নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় যারা জড়িত পুলিশ তাদের খুঁজছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন জানান, নৈশপ্রহরীর মৃত্যু নিয়ে চা বাগানে উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, প্রাথমিক ভাবে শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া কর্তৃপক্ষ মেনে নেয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। আগামী বৃহস্পতিবার আমার কার্যালয়ে বিষয়টি পুরোপুরি ভাবে মিমাংসা করা হবে। এদিকে বৈঠক শেষে চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর নেতৃবৃন্দরা নিহত শ্রী প্রসাদের বাড়িতে গিয়ে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতাসহ সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য গত ২৯ শে জুন গভীর রাতে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়ন এর দলই চা বাগানের মুল কার্যালয়ে দূর্বৃত্তরা নৈশ প্রহরীদের উপর হামলা করে তাদেরকে বেধে কক্ষগুলোতে আগুন দেয়,এতে ৫ টি কক্ষ সম্পুর্ন ভাবে ভস্মীভূত হয়ে ৫২ বছরের রক্ষিত সকল ডকুমেন্টস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।