
ধলাই ডেস্ক: অতীতের সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হার মানিয়ে উপকূলবাসীকে সর্বহারা করে দিয়েছে আম্ফান। বুধবার (২০ মে) দিবাগত রাতে দক্ষিণ উপকূলজুড়ে আঘাত হানে আম্ফান। এর প্রভাবে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাসিয়ে দেয় খুলনার কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন।
উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। লন্ডভন্ড হয়েছে জনপদ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার গাছপালা, গবাদী পশু। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ। বর্তমানে এসব এলাকায় খাবার পানির তিব্র সংকটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
বেদকাশী এলাকার রুহুল আমিন সানা, জাহাঙ্গীর কবীর, কুদরত সানা, উত্তর বেদশকাশী এলাকার আতাহার সানা ও আইয়ুব আলী সানা বলেন, ত্রাণ সামগ্রী বলতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর ইউনিয়নের ৩৬ পরিবারের মাঝে ২ বান্ডিল ঢেউটিন, ৬ হাজার টাকা ও হাউজিং কিডস বিতরণ করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা মানুষগুলো খাদ্যাভাবে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে উঁচু রাস্তা ও ঢিবির ওপর ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেখানেও পানি উঠে গেছে। লোনাপানির প্রভাবে এলাকায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
আম্ফানের তৃতীয় দিনে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শুধুমাত্র লবণাক্ত পানির ছোবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, হরিণখোলা, ঘাটাখালি বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে হাজার হাজার মানুষ বাঁধ বাঁধায়ের মরণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লোনাপানির হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর বেদকাশী ইউপির গাজিপাড়া, কাশিরহাটখোলা, গাববুনিয়া ও পাথরখালি ও মহারাজপুর ইউনিয়ের দশালিয়া, লোকা হামকুড়ুর গোড়া এলাকার বাসিন্দারা।
আম্ফানের তিনদিন অতিবাহিত হলেও পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে আসতে দেখা যায়নি। আজ (২৩ মে) পানি সম্পদ সচিবসহ পাউবোর কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জাফর রানা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৭৫ হাজার টাকাসহ ৫০০ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানরত মানুষের খাদ্য সামগ্রী দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও বলেন, বাঁধের কাজে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন শতাধীক সদস্যের একটি টিম কয়রাতে অবস্থান করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হরিণখোলা গ্রামের কেরামত আলী (৭৫) বলেন, আইলা, সিডরসহ অনেক বড় বড় ঝড়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু এই ঝড়ে পানির কাছে হেরে গিয়েছি। জোয়ারের তোড়ে ঘর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় জীবনযাপন করছি।
একই কথা বললেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আরও কয়েকজন বৃদ্ধ। তাদের একটাই দাবি তারা ত্রাণ না, টেকসই বেড়িবাঁধ চান।
সূত্র: জাগো নিউজ…