কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর নাম ভাঙ্গিয়ে শমশেরনগরে একটি বেকারী থেকে প্রতারণা করে বিকাশে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও মিষ্টি, বেকারী দোকানের তালিকাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা দাবী করে। গত শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে মোবাইলে ইউএনও পরিচয় দিয়ে একজন ইউপি সদস্যের মাধ্যমে দফাদারকে ব্যবহার করে শমশেরনগর বাজারে এই প্রতারণা করে। গতকাল শনিবার আরও একটি বেকারীতে গেলে প্রতারনার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
শমশেরনগর বাজারের কাজী বেকারীর মালিক সোয়াব উল্ল্যা বলেন, শমশেরনগর ইউনিয়ন দফাদার মনু মিয়া বাজারের বেকারী ও মিষ্টি দোকানে এসে ইউএনও পরিচয়ে একটি মোবাইল নাম্বারে কথা বলতে অনুরোধ জানায়। এসময়ে ০১৭৩১৫৯৯৪৬৬ মোবাইল নম্বরে কল দিলেই নিজেকে কমলগঞ্জের ইউএনও পরিচয় দিয়ে বিএসটিআই সহ সব ধরণের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চায়। লাইসেন্স আছে জানার পরেও রোববার অভিযান পরিচালনা করা হবে ও নানা ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে লাইসেন্স না থাকলে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে আর লাইসেন্স থাকলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জোর দাবি করে। পরে যেকোন মূল্যে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে হুমকি দেয় এবং প্রতারক তার রকেট নাম্বার ০১৭৯৩৬৬৯০০৩ দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে। ব্যবসায়ী ওই নাম্বারে ৫ হাজার টাকা পাঠান। পরে সন্তোষ্ট না হয়ে পরবর্তীতে কাজী বেকারীর মালিক সোয়াব উল্ল্যাকে আবারও ধমক দিলে পুনরায় প্রতারকের বিকাশ নাম্বার ০১৮১৩০১৫৮৭১ তে বাকি পাঠাতে বলে। ব্যবসায়ী বিকাশ নাম্বারে আরও ৫ হাজার টাকা প্রেরণ করেন।
গতকাল শনিবার বাজারের ঢাকা বেকারীর মালিক জাকির হোসেনের সাথে ০১৭৩১৫৯৯৪৬৬ নাম্বারে ইউএনও পরিচয় দিয়ে টাকা দিতে দাবি করলে বিকাশে না দিয়ে সরাসরি এসে টাকা নিতে অনুরোধ করেন। পরে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, সম্পাদক ইউএনও’র নাম্বার যাচাই করতে গিয়ে প্রতারনার বিষয়টি পাস হয়।
শমশেরনগর ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী জানান, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিছিলে থাকাকালীন একটি নাম্বার থেকে ফোন আসে এবং ইউএনও পরিচয় দেয়। পরে একজন দফাদারের নাম্বার চাইলে আমি ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মনু মিয়ার মোবাইল নাম্বার দেই। এরবেশি জানি না।
শমশেরনগর ইউনিয়নের দফাদার মনু মিয়া বলেন, আমার কাছে ইউএনও পরিচয় দিয়ে ০১৭৩১৫৯৯৪৬৬ নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে শমশেরনগর বাজারের প্রতিটি বেকারী ও মিষ্টি দোকানের নাম, মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে উনার সাথে কথা বলিয়ে দিতে বলেন। পরবর্তীতে ফোনকলের নির্দেশ মোতাবেক আমি প্রতিটি দোকানের তালিকা করি এবং তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম্বারে উনাকে কথা বলে দেই। পরে কাজী বেকারির মালিক সোয়াব উল্ল্যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
এ ব্যাপারে শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, আমি ইউএনও স্যারের কাছ থেকে জেনে দফাদারকে ডেকে এনে শাসিয়ে দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ১০ হাজার টাকা ফেরত দিতে এবং থানায় সাধারণ ডায়েরী করার জন্য বলেছি। ভবিষ্যতে যেন আর এধরণের কোন ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এটি অভিনব প্রতারনা। ওই দফাদারকে আটক করতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
প্রতারনাকারী ০১৭৩১৫৯৯৪৬৬ মোবাইল নাম্বারে এই প্রতিবেদকের কথা মোবাইলে কথা হলে তিনি নিজেকে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ম্যাজিষ্ট্রেট বলে দাবি করে ফোন কেটে দেন।
এব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের সহাকারী পরিচালক মো. আল-আমীন বলেন, এভাবে কিছু প্রতারক সহজ সরল ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব বিষয়ে কেউ যেন টাকা না দেয় এবং সতর্ক থাকে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মোবাইলে চাইলেই টাকা দিবেন কেন। এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ইউএনও’র সাথে কথা বলবেন বলে জানান।