কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। দুটি কমিটিকেই উপজেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। জেলা ছাত্রলীগ এ ঘটনায় কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার রাতে পতনঊষার শহীদনগর বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ব্যবসায়ীসহ তিনজন আহত হয়েছে। নতুন কমিটি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
ছাত্রলীগ সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল ইসলাম ইমনকে সভাপতি ও শাকির হোসেন জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট পতনঊষার ইউনিয়নের ছাত্রলীগ কমিটি অনুমোদন দেয় কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাহাত ইমতিয়াজ রিপুল ও সাধারণ সম্পাদক সাকের আলী সজিব। অনুমোদনের দুইদিনের মধ্যেই এই কমিটি থেকে মৌখিক ও সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট দিয়ে কয়েকজন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরপরই কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: শাহাব উদ্দিন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনসুর খান উপজেলা ছাত্রলীগের প্যাডে মো: জুনেদ খানকে সভাপতি, রিন্টু দাশকে সাধারণ সম্পাদক ও শিপলু মিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আরো একটি কমিটি অনুমোদন দেন। এ ঘটনার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমীরুল হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: শাহাব উদ্দিন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনসুর খানকে সংয়গঠনের শৃংখলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিস্কার করে তাদের দেওয়া বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে।
এ ঘটনার জের ধরে গত রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পতনঊষার শহীদনগর বাজারে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী সহ সভাপতি রুহিন চৌধুরীর সাথে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাকির হোসেন জয়, ছাত্রলীগ নেতা ফেরদৌস খান ও ফাহাদ চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে এ তিন ছাত্রলীগ নেতা স্থানীয় একটি দোকানে রুহিন চৌধুরীর উপর হামলা চালাতে চেষ্টা চালায়। এ সময় দৌড়ে রুহিন বাড়িতে চলে যায়। পরে দোকানে ভাংচুর ও একজন মাছ ব্যবসায়ীসহ তিনজন আহত হন। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতংকে দোকানপাঠ বন্ধ করেন। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। আহত মাছ ব্যবসায়ীকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে এই তিন ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ফেইসবুকে লাইভ দিয়ে রুহিন চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে হামলা চালানো হয়েছে অভিযোগ করেন রুহিন চৌধুরী। খবর পেয়ে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মোটরসাইকেল জব্দ করে।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি অনুমোদন নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক দ্বায়িত্বশীল নেতার সাথে আলাপকালে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের অনুমোদিত পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি সর্ম্পকে তারা কিছুই জানেন না। তারা মনে করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সকল নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে কমিটি অনুমোদন দিলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এছাড়াও সোস্যাল মিডিয়ায় সদ্য ঘোষিত পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এ দুই গ্রুপের উত্তেজনামুলক লেখালেখি দেখে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারন মানুষের ধারনা যেকোনো মুহুুর্তে এ দুই গ্রুপের মধ্যে বড় ধরনের সংর্ঘষ ঘটতে পারে।
এবিষয়ে নবগঠিত কমিটির দ্বায়িত্বশীল পদ থেকে নেতৃবৃন্দের পদত্যাগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক ঘোষিত পতঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম ইমন বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক কোনো কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন না বলেই জেলা ছাত্রলীগ তাদেরকে বহিস্কার করেছে। তার সর্ম্পকে অপরাংশের করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পদবঞ্চিত হয়ে তারা আমার বিরেুদ্ধে উদ্দেশ্যমুলক বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করে আসছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ বিষয়ে আলাপের জন্য এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাকির হোসেন জয়ের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আলাপকালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক বাতিলকৃত অপর কমিটির সভাপতি জুনেদ খান বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে আওযামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও আমি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পুর্বের কমিটিতে আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ইউনিয়ন ছালীগের কমিটির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম ইমনকে ইভটিজিংয়ের একাধিক অভিযোগের দায়ে পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। এছাড়াও শাকির হোসেন জয় একজন অছাত্র, তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অপরাধমুলক মামলা।
এ প্রসঙ্গে পদত্যাগ করা ও সদ্য ঘোষিত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রিন্টু দাশ অপর অংশের কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিতে অনুপ্রবেশ করেছে যা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে আমি মনে করি।
সদ্য অনুমোদন দেওয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির প্রসঙ্গে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম সাধারন মনসুর খান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছি। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগ ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে চাইলে আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবি জানাই। কিন্তু তারা তা না করে উপজেলা ছাত্রলীগের সিংহভাগ নেতৃবৃন্দদের না জানিয়েই বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে পতনঊষার ইউনিয়ন কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এইরকম বিতর্কিতদের হাত থেকে সংগঠনকে রক্ষার করতে ও পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলা ছাত্রলীগ কোন প্রকার শোকজ না করে বহিস্কার করতে পারে না।
পতনঊষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম ইমন ও সম্পাদক শাকির হোসেন জয়ের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সাকের আলী সজিব বলেন, আমরা সবার সাথে আলোচনা করেই কমিটি দিয়েছি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহ-সভাপতি ও যুগ্ম -সাধারন সম্পাদকেরা কোনো কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন না। এ জন্য জেলা ছাত্রলীগ তাদের বহিস্কার করেছে এবং তাদের অনুমোদিত কমিটি বাতিল ঘোষনা করেছে।