কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় এক সপ্তাহে ১৫টি মন্দিরে চুরি সংঘটিত হয়েছে। চোরচক্র মন্দিরের মালামাল চুরি পাশাপাশি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবত গীতা ছিড়ে ফেলে। এটাকে অনেকে চুরি না বলে নাশকতাও বলছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, গত সোমবার দিবাগত রাতে রহিমপুর ইউনিয়নের দেবীপুর সার্ব্বজনীন দেবালয় ও জগন্নাথ আশ্রমের দানবাক্স ভেঙ্গে চুরি ও একই গ্রামের রামপদ ভট্টাচার্য্য, নিতাই চন্দ্র পাল, অবিনাশ মল্লিক, ঝুনু বৈদ্য, গত ২৪ অক্টোবর রোববার দিবাগত রাতে পতনঊষার ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের সুব্রত চক্রবর্তী, সোনারগাঁও গ্রামের হরি দেবনাথ ও মন্মত দাশ, গত ২২ অক্টোবর গভীর রাতে রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ দেবনাথ, কাজল দেবনাথ, পরেশ পাল ও সুজিত পাল এবং বিষ্ণুপুর গ্রামের নির্মল আচার্য্য ও অসিত আচার্য্যরে বাড়িতে স্থাপিত মন্দিরের তালা ভেঙ্গে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব মন্দিরে নগদ টাকা, পূজার মূল্যবান সামগ্রী সহ প্রায় ছয় লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এসব চুরির সময় চোরচক্র ধর্মপুর ও সোনারগাঁও গ্রামের মন্দির থেকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবত গীতা ছিড়ে ফেলে দেয়।
আলাপাকালে ধর্মপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ দেবনাথের স্ত্রী কৃষ্ণা রানী দেবী জানান, বাহরাইন থেকে আনা ১টা কৃষ্ণ মুর্তি, ১টা লক্ষী নারায়নের মুর্তিসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেবতা ঘরে তালা ভেঙ্গে নিয়ে যায় চুরেরা। দেবীপুর সার্ব্বজনীন দেবালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সত্যেন্দ্র কুমার পাল (নান্টু), দেবীপুর গ্রামের অপু মল্লিক, সোনারগাঁও গ্রামের হরি দেবনাথসহ স্থানীয়রা জানান এরকম ঘটনা পূর্বে ঘটেনি। এটি চুরি নয়, পরিকল্পিত একটা নাশকতা।
রহিমপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ খান জানান, আমরা ধর্মপুর এলাকায় যে স¤প্রীতি নিয়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি, এ সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য যারা এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের খোঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাশ ও উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদেও সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব এক সপ্তাহে ১৫টি দেবমন্দিরে চুরির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের খোঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, এসব চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে কমলগঞ্জ উপজেলার দুটি মন্দিরের প্রতীমা ভাংচুরসহ ১৪টি মন্দিরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় ৬টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা ও দুটি জিডি রেকর্ডভূক্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।