কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি গ্রামে নিখোঁজের ২ ঘন্টা পর ঘরের পিছনের গর্ত থেকে ১ম শ্রেণির ছাত্রীর গলাকাটা ও ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কেছুলুটি গ্রাম থেকে বুধবার (৯ মার্চ) বিকলে ৫ টায় নিখোঁজ হলে সন্ধ্যা ৭টায় তার লাশ পাওয়া যায়। নিহত ফাতেমা জান্নাত মৌ (৬) কেছুলুটি গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে ও কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাতেই সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত স্কুল ছাত্রী ফাতেমা জান্নাতের বাবা ফরিদ মিয়া বলেন, তার মেয়ে ফাতেমা জান্নাতকে বুধবার আছরের নামাজের পর বিকেল ৫টা থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখোঁজির পর সন্ধ্যা ৭টায় তাদের বসত ঘরের পিছনের একটি ছোট মাটির গর্তে তার গলাকাটা, পেটের ভুড়ি বের হওয়া ও ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। এ সময় কেছুলুুটি গ্রামটি বিদ্যুৎবিহীন ছিল। ঘটনাটি শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করলে রাত সাড়ে ৭টায় পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে লাশ উদ্ধার করেন। বৃহস্পতিবার সকালে নিহত লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
নিহতের পিতা স’মিল কর্মী ফরিদ মিয়া বলেন, তাঁর অবুঝ শিশুকে কে বা কারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে দায়ীদের খোঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন, এভাবে যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়।
কেছুলুটি গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী মো: দুরুদ আলী নৃশংস এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এ বর্বর ঘটনার পর থেকে পুরো গ্রামে আতংক বিরাজ করছে। এজন্য বৃহস্পতিবার কোমলমতি অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যায়নি। তিনি এ ঘটনার দ্রæত রহস্য উদঘাটন করে দায়ীদের খোঁজে বের করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন কেছুলুটি গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। বিপুল সংখ্যক লোকজন বাড়িতে ভিড় করছেন। নিহতের মা রবি আক্তার ওরপে রেলী বারবার বিলাপ করে কাঁদছেন। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ফাতেমা জান্নাত মৌ সবার ছোট। সে কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত কেছুলুটি বায়তুস সুন্নাহ জামে মসজিদ কেন্দ্রের কোরআন শিক্ষা স্তরের শিক্ষার্থী। স্থানীয়রা জানান, নিহত স্কুল ছাত্রী ফাতেমা জান্নাত মৌ এর লাশ ঘরের পিছনের গর্তে পা উপরে দিয়ে পুতা ছিল। অনেক খোঁজাখোজির পর নিতের মা রুবি আক্তার ওরপে রেলী মেয়েকে গর্তে পুতা পেয়ে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। কি কারণে এ ঘটনা সংঘটিত হলো তা কেউই বলতে পারছেন না। তবে এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে।
শিশু হত্যাকান্ডের কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক সোহেল রানা সুর্নির্দিষ্ট কারো সংশ্লিষ্টতা এখনও পাওয়া যায়নি, তবে পারিবারিক বিরোধ বা ব্যক্তিগত বিরোধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জোর তদন্ত চলছে। খুব শিঘ্রই জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটা নিশ্চিত, এটি একটি হত্যাকান্ড। তবে তদন্তের পরই বিস্তারিত বলা যাবে। ঘটনা উদ্ঘাটনে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত চলছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত স্কুল ছাত্রীর মা রুবি আক্তার ওরপে রেলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।