পূজা উদযাপন পরিষদের নেতার অনুরোধেই গান: পুলিশ

প্রকাশিত: ৩:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২৪

ধলাই ডেস্ক: পূজা উদযাপন পরিষদের এক নেতার অনুরোধেই ইসলামিক গানের দলটি মণ্ডপে গান পরিবেশন করেছিল বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ডিসি (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দিন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত লাগানোর চেষ্টা ছিল কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া যার অনুরোধে গান করা হয়েছে তাকেও খোঁজা হচ্ছে।

উক্ত ঘটনায় দুজনকে আটকের পর শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ডিসি রইছ উদ্দিন বলেন, পূজা মণ্ডপে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির ঘটনায় মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও শহীদুল করিম নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা দুজন পৃথক দুটি মাদরাসার শিক্ষক।

তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নগরের জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ শিল্পী গোষ্ঠির সদস্য শহীদুল করিম, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মোহাম্মদ মামুন পূজার অনুষ্ঠানে আসেন এবং একটি ইসলামিক গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশ করেন। এরমধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা দুটি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

যা ঘটেছিল মঞ্চে

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে ঘটনাটি ঘটে। এর পরপরই এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। তার মধ্যে একটি গান ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। সংগঠনটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বলে গুঞ্জন উঠলেও সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তিন মিনিটের একটি ভিডিওটিতে দেখা গেছে, মণ্ডপের অনুষ্ঠানের মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন ছয় তরুণ। এ সময় একটি ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন তারা। আশপাশে উপস্থিত কয়েকজনকে সেই ঘটনা মুঠোফোনে ধারণ করতে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি ছাত্রশিবিরের কোনো অঙ্গসংগঠন নয়।

ছয় তরুণকে আমন্ত্রণের বিষয়টি জানতে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বলেন, ঐ তরুণরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বলেছেন- তারা মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন। পরে তারা উঠে গান শুরু করেন এবং দুটি গান পরিবেশন শেষে তারা চলে যান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।

সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…